ঢাকা, ২৯ ভাদ্র (১৩ সেপ্টেম্বর) :
প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের
রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে
পরিমার্জিত কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিমার্জিত নতুন কারিকুলাম অনুমোদন
দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে ২০২২
সালে, আর বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
আজ সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি
সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের
সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল
ইসলাম খান সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
দীপু মনি বলেন, নতুন এই কারিকুলামে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে
বলা আছে। শিখন সময় প্রাথমিকে কতটা, মাধ্যমিকে কতটা হবে তা-ও বলা আছে।
প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম-২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০; সেগুলো
সম্পর্কেও এই কারিকুলামে বলা আছে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির
পাইলটিং করা হবে। প্রাথমিকে ১০০টি এবং মাধ্যমিকের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং হবে।
মাধ্যমিকের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছয় মাস পাইলটিংয়ের পর
সরকার বিশ্লেষণ করতে পারবে। ২০২৩ সালে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু
করা যাবে। ২০২৩ সালে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম
শ্রেণিতে এটি চালু হবে। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম
শ্রেণি। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি ও মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
দীপু মনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট
(জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও
দেওয়া হবে। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীকে পাবলিক পরীক্ষা বলা হবে না।

প্রাথমিক শেষে একটা এবং ক্লাস এইট শেষে একটা সনদ পাবে। কিন্তু সেগুলো ক্লাস
সমাপনী পরীক্ষা। ক্লাস সমাপনী শেষে মূল্যায়ন হবে। বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের দিক থেকে
শিক্ষার্থীদের যেখানে যেখানে সনদ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও সনদ দেয়া হবে। সমাপনী প্রতি
ক্লাসেই থাকবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ধরনের পরীক্ষা থাকবে না। তৃতীয়
শ্রেণির পর থেকে সব শ্রেণিতেই সমাপনী পরীক্ষা রয়েছে। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতেও
সনদ দেয়া হবে। সনদ দেওয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই।
মন্ত্রী আরো বলেন, নবম ও দশম শ্রেণি আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা করে পরীক্ষা
হবে। শুধু দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের
পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নবম ও দশম শ্রেণির বই আলাদা হয়ে যাবে। কোনও বিভাগ
থাকবে না। সব শিক্ষার্থীই ১০টি বিষয় পড়বে।
চলমান পাতা-২

= ২ =

উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক
বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০
শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রয়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয়
শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা বই থাকবে,
আলদাভাবে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশের দুই পরীক্ষা ও মূল্যায়নে এইচএসসির চূড়ান্ত
ফলাফল দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে শিখনকারীর মূল্যায়ন
বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে শতভাগ। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত,
বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর
সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। ৬০ শতাংশই ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প কলা (বিদ্যমান চারু ও কারুকলা)
এগুলো শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলাম বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও
অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন
মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয়
জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প
ও সংস্কৃতি (বিদ্যমান বিষয়-চারু ও কারু কলা) শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম
ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের
শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। নবম ও দশম
শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।