ঢাকা, ১৮ কার্তিক ( ৩ নভেম্বর) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৪ নভেম্বর ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’
উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :

“শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান করা হচ্ছে
জেনে আমি আনন্দিত। আমি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত সকল শিল্প উদ্যোক্তাকে অভিনন্দন জানাই

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে
শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। শিল্পখাতকে শক্তিশালী করতে
স্বাধীনতার পর তিনি বৃহৎ শিল্প কারখানাগুলোর বেশিরভাগ জাতীয়করণ করেন। জাতির পিতার অর্থনৈতিক
দর্শনের আলোকে বিগত প্রায় ১৩ বছর আওয়ামী লীগ সরকার শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যথাযথ সুরক্ষার
মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং রপ্তানিমুখি শিল্পের বহুমুখী
প্রসারপূর্বক আরও অধিক প্রতিযোগিতা সক্ষম করতে কাজ করে যাচ্ছে। দিন বদলের অঙ্গীকার ও সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শিল্পখাতে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ফলে দেশে শিল্পখাত ক্রমেই
সমৃদ্ধ হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে মানুষের
ভাগ্যোন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি আত্নমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার
জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন
করেছে। এ বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি।  এসময়ে
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন
করেছে। আমরা আজ আত্মমর্যাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। সারা বিশ্বের কাছের
বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ এবং এক বিস্ময়ের নাম। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট
(এসডিজি) অর্জনের পথে ২০১৫ থেকে ২০২০ সময়কালে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি ‘এসডিজি
প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও
বেগবান করবে।

আমাদের সরকার বিভিন্ন শিল্পবান্ধব পরিকল্পনা, বিনিয়োগ চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর,
যুগোপযোগী আইন, নীতি, বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে উন্নয়নের গতিধারাকে বেগবান করেছে, যা
শিল্পের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরু্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান
ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। শিল্পখাতে উদ্যোক্তাদের অধিকতর সম্পৃক্ততা, স্বীকৃতি প্রদান,
প্রণোদনা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান করা
হচ্ছে। আমরা দেশের সম্ভাবনাময় শিল্পসমূহের বিকাশ ঘটাতে টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও জ্ঞানভিত্তিক
শিল্পায়নের ওপর সর্ব্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছি। জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ
সেক্টরকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের শিল্পনীতির ফলে পাদুকা, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও
পাটজাত পণ্য, ফার্নিচার, ডিজিটাল পণ্য, মটর সাইকেল, সাইকেল, বস্ত্র, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য,
ইলেকট্রনিক পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইত্যাদি বহুমুখী শিল্প-
কারখানাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ
অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, শিল্পপার্ক ও শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়েছে। শিল্পখাতে নতুন উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া সুসংহত করতে
মন্ত্রণালয় থেকে নীতি সহায়তা দেওয়ার ফলে দেশের শিল্পখাত উজ্জীবিত হয়েছে।

আমি আশা করি, শিল্পখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প
উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদানের এ মহতী উদ্যোগ দেশের শিল্পোদ্যোক্তাগণকে টেকসই শিল্পায়ন ধারার প্রসার
ঘটাতে আরও উৎসাহিত ও সক্ষম করে তুলবে।

আমি ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৯’ প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”