ঢাকা, ১৪ ফাল্গুন (২৭ ফেব্রুয়ারি) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে
শহিদ সেলিম ও দেলোয়ারের ৩৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনকে
বিপন্ন করে পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতি
হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পাকিস্তানিদের এদেশীয়
দোসরদের হাতে তাঁকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। এরই সঙ্গে বাঙালিরা তাদের আত্মমর্যাদা
হারিয়েছিল, হারিয়েছিল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। জাতির পিতাকে প্রায় সপরিবারে নির্মমভাবে
হত্যা করার পর স্বৈরশাসকেরা তাদের বুট ও বেয়নেটের খোঁচায় এদেশের মানুষের ভাগ্য লিখতে শুরু
করেছিল। আমরা দু’বোন বিদেশে থাকার কারণে আমাদেরকে তারা হত্যা করতে পারেনি। দীর্ঘ ছয় বছর
আমাদের বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হিসেবে অবস্থান করতে হয়েছে।

আমি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে এসেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য
লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। দেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে
নেতৃত্ব দেই। তিরিশ লাখ শহিদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত
স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কত তাজা প্রাণ ঝরে পড়েছে
হিসেব নেই। ১৯৮৪ সালের এই দিনেও ছাত্রলীগ নেতা এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম এবং কাজী দেলোয়ার
হোসেনের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন
করছি।

সেদিন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে অসংখ্য ছাত্রলীগ,
যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণ সংহতি প্রকাশ করে যোগ দিয়েছিলেন। মধুর ক্যান্টিন
থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছিল, যার সামনে এবং পিছনে ছিল পুলিশের ট্রাক। মিছিলটি যখন ফুলবাড়িয়ার
নিকট পৌঁছায়, ঠিক তখনি স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিলের ওপর অতর্কিতে পিছন থেকে ট্রাক
চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাহাদতবরণ করেছিলেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আবাসিক ছাত্র পটুয়াখালী জেলার বাউফলের সেলিম এবং পিরোজপুর
জেলার ভান্ডারিয়ার দেলোয়ার, ক্ষত-বিক্ষত ও আহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন অসংখ্য ছাত্র এবং
আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীগণ। তাঁদের এ মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে
গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের দুর্বার আন্দোলনকে আরো বেগবান করেছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে সেলিম ও দেলোয়ারসহ যারা প্রাণ বিসর্জন
দিয়েছেন, তাঁদের রক্তের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক প্রাণের

আত্মত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আবারও
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জনগণ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পায়।
আমি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং
তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। পরিশেষে, সেলিম ও
দেলোয়ারের ৩৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা
করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”