অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও বির্তকিত ও ক্ষিপ্ত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবার ফিল্মি কায়দায় এক সাংবাদিকের ঔষধের ফার্মেসী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলেন। বদলির আদেশের মেয়াদ দুদিন পেরিয়ে গেলেও অপকর্মের খবর প্রকাশের জেরে তিনি এমন ঘটনা ঘটান। বুধবার দুপুরে উপজেলার চাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সাংবাদিকগণের সূত্রে জানা গেছে, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী এখানে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। এরপর নৌকার বিপক্ষে কাজ করে সমালোচিত হন ওই ইউএনও। গত ৪ ফেব্রুয়ারী অবৈধ তিনটি ইটভাটায় লোক দেখানো অভিযান করেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বৈষম্যের জরিমানায় ক্ষুব্দ হন ইটভাটার মালিকরা। দুদিন পর অর্থের বিনিময় ওই অবৈধ ইটভাটা আবার চালু হলে ওই কর্মকর্তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এরপর মনগড়া উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটি করে আরো বিতর্কিত হন ঐ ইউএনও। তার এমন নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা খবর প্রকাশ করে। এসব সংবাদ প্রকাশ হলে গত ১২ ফেব্রুয়ারী তার বদলির আদেশ হলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী তার নতুন কর্মস্থলে যাওয়ার আদেশ হলেও সাংবাদিকদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে তিনি সেখানে যাননি। এরপর মাটি খেকোদের চারটি ভেকু জব্দ ও অর্থের বিনিময়ে জব্দকৃত ভেকু ছেড়ে দিয়ে সমালোচিত হন ওই কর্মকর্তা। এমন কি তার অলিখিত অনুমোদনে প্রায় অর্ধশত পয়েন্টে অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি, উচু জমি, খালের পাড়, টিলা, নদীর তীরসহ মাটি কেটে নিচ্ছে মাটি খেঁকোরা। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রচারের লক্ষ্যে ওই কর্মকর্তা বক্তব্য নিতে গেলে দুজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর চটে যান। এক পর্যায় তার আনসার সদস্য দিয়ে ওই সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। ওই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে তার অফিস থেকে বের করে দেন ওই কর্মকর্তা। তিনি ব্যক্তি আক্রোশে গত রোববার সকালে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন উপজেলা চত্তরে গাড়ি রাখায় সেটাতে তালা ঝুলিয়ে দেন ওই ইউএনও। পরে তালা সম্বলিত গাড়ির ছবি ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই দিনেও বুধবার দুপুরে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিনিধি ও কালিয়াকৈর মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমারত হোসেনের ঔষধের ফার্মেসীতে ফিল্ম কায়দায় হানা দেয় ওই ইউএনও ও তার সঙ্গীরা। গত ৩৮ বছর ধরে উপজেলার চাবাগান বাজারের ফার্মেসী চালালেও কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই সাংবাদিকের ঔষধের দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন। এতে ঔষধ নষ্টসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসময় ওই দোকানের সাথে সংযুক্ত অপর দোকানও ভাঙ্গা যায়। এমন কি ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেন ওই বির্তকিত ইউএনও। দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ও বন্ধের দিনে অপর এক সাংবাদিকের ঔষধের দোকান গুড়িয়ে দেওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহলের লোকজন। তারা বলছেন, আসলে দেশে সাংবাদিকরা এখন নিরাপদ না, সেখানে সাধারণ জনগন কতটুকু নিরাপদ আছে? তিনি এখানে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব দু’একজন ইউএনওর কারনে দেশের সকল ইউএনও, প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান তারা।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইমারত হোসেন বলেন, ইউএনও যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছেন। এ নিয়ে কালিয়াকৈরের সাংবাদিকসহ গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিরা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় নিউজ করলে তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু আমি কোনো নিউজ না করলেও তিনি আমার ফার্মেসী গুড়িয়ে দেন। বাজারের পেরিফেরি জমিতে ফার্মেসীটি করা হলেও নিয়ম অনুযায়ী বাজার ইজারাদারদের টোল পরিশোধ করে আসছি। এছাড়াও লীজের জন্য আবেদন করা হয়েছে।আমি তাকে কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও তিনি কোনো কাগজপত্র দেখেননি। বিনা নোটিশে মাত্র ১০মিনিটে ব্যবধানে ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িযে দেন।একই জমির উপরে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠাস না ভেঙ্গেই দ্রত চলে চলে যায়। চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী জানান, সরকারী জমি দখল করে তিনি দোকান করতে ছিলেন। এ জন্য অভিযান চালিয়ে তার দোকান গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় তার নানা অপকর্মের কথা এড়িয়ে যান ওই কর্মকর্তা।
গাজীপুর প্রতিনিধি:
সোহরাব হোসেন