বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা সারাদেশে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় তথা শেষ দিন আজ। আগের দুদিনের মতো তৃতীয় দিনেও ঢাকার সড়কগুলো অনেকাংশে ফাঁকা। যানবাহন তুলনামূলক কম। গণপরিবহন চলছে টুকটাক। এতে সকাল থেকে কর্মস্থলগামী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

আগের দুদিনের মতো অবরোধের তৃতীয় দিনেও সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রীশূন্য টার্মিনালে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। বিভিন্ন পরিবহনের বেশিরভাগ কাউন্টারই বন্ধ রয়েছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালের একাধিক টিকিট কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই যাত্রীর দেখা নেই। বেশিরভাগ আসন ফাঁকা রেখে বাস ছেড়ে গেলে তাদের রাস্তার খরচ ওঠে না। এ কারণে পরিবহনগুলো যাত্রীর অপেক্ষা করছে। তাদের অনেকে জানিয়েছেন, দুপুরের পর হয়তো যাত্রীসংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনাল ছাড়াও রাজধানীর টেকনিক্যাল, পর্বত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।

অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দুদিন গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকার সড়কগুলো ছিল বেশ ফাঁকা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সীমিত ছিল গণপরিবহন চলাচল। খুব একটা ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার যানবাহনও।

বৃহস্পতিবার সকালের চিত্রও ছিল একই রকম। গত দুদিনের মতো আজও ফাঁকা গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা। মহাসড়কে কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলেও দূরপাল্লার গাড়ি চলছে না। বাস টার্মিনাল থেকেও ছাড়ছে না কোনো গাড়ি। সাধারণ সময়ের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা একেবারে কম।

গাবতলী বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাত্রী না থাকায় এবং অবরোধে গাড়ি পোড়ানোর ভয়ে তারা দূরপাল্লার বাস ছাড়ছেন না।

চুয়াডাঙ্গা-মাগুরাগামী গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের ম্যানেজার শেখ মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বাস ছাড়ার চিন্তা করলেও যাত্রী নেই। যাত্রী ছাড়া বাস ছেড়ে কী হবে। সকাল থেকে বসে আছি, মাত্র ৩-৪ জন যাত্রী এসেছে। এত ঝুঁকি নিয়ে ৩-৪ জনের জন্য বাস ছাড়ার মানে হয় না। এছাড়া অবরোধে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। তবে বাসে অগ্নিসংযোগের মতো ক্ষতির মুখে পড়ার চেয়ে ছেড়ে না যাওয়াই ভালো মনে করছেন পরিবহন মালিকরা।

অন্যসব বাস চলাচল না করলেও এদিন সকালে মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়াগামী সেলফি পরিবহনের বাস যথারীতি চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে, অবরোধে বাস না ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যমুখী যাত্রীরা। অনেকে বাস না পেয়ে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন।

ছেলে অসুস্থ, তাই জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হবে হাফিজুল ইসলামকে। সড়কের ঝুঁকি জেনেও অবরোধের দিনে ঘর ছেড়েছেন তিনি। হাফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ি যেতে হবে। সকাল থেকে টার্মিনালে এসে অপেক্ষা করছি। কোনো বাস ছাড়ছে না। দেখি, ভিন্ন কোনো উপায় পাওয়া যায় কি না।

রংপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেও গাড়ি না পেয়ে হতাশ আরেক যাত্রী সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বাড়ি যেতে হবে পারিবারিক কাজে। তিনদিন ধরে বাস চলছে না। গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা প্রাইভেটকার ভাড়া করে যাওয়া যায়। এতে খরচও হয় দ্বিগুণ। অপেক্ষা করছি, দেখি কোনো ব্যবস্থা হয় কি না।

গণপরিবহন ছেড়ে না গেলেও অবরোধের তৃতীয় দিন সকাল থেকে গাবতলী এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। দেখা মিলেনি তাদের নেতাকর্মীদেরও। তবে টার্মিনালে করা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মঞ্চে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার গাবতলী এলাকায় আওয়ামী লীগের পৃথক দুটি সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সকাল থেকে ওই এলাকায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

এদিকে, সড়কপথে গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকায় অবরোধের প্রথম দুদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেশিরভাগ ট্রেন ছেড়ে গেছে নির্দিষ্ট সময়ে।

কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীরা জানান, বাসে হুটহাট আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাই চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া রাস্তায় বাসের সংখ্যাও খুব কম। দূরপাল্লার বাস তো ছাড়ছেই না। এ কারণে নিরাপদ ভ্রমণের কথা মাথায় রেখে তারা ট্রেনে চলাচল করছেন।