বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন বুধবার (১ নভেম্বর)। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। পুলিশ, আওয়ামী লীগ আর বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষ, এরপর হরতাল এবং সবশেষ বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচিতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিরুপ প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে চরম ক্ষতি হবে তাদের।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে শাহবাগ ফুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ফুল বিক্রেতারা দোকান গোছাচ্ছেন। কেউ ফুল বিক্রির উপযোগী করে তুলছেন। কেউবা ফুলের তোড়া তৈরি করছেন। সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে রাতে ক্রেতা সমাগম হলেও আজ রাতের চিত্র ভিন্ন৷
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধ শুরু হওয়ার আগ থেকে অর্থাৎ গত ২৮ অক্টোবর থেকেই তাদের ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি হতো এখন তার অর্ধেকে নেমে এসেছে।
শাহবাগের এই ফুল মার্কেটে গোলাপ, দোলনচাপা, লিলি, অর্কিড, রজনীগন্ধ্যা, গ্লাডিওলাসসহ নানান রকম ফুল খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়। বিয়ের, যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের ফুল পাওয়া যায় এখানে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন ফুল কিনতে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ক্রেতার দেখা মেলা ভার।
মো. মানিক শেখ নামে এক ফুল বিক্রেতা বলেন, আগে দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতাম। এখন পাঁচ-সাত হাজার টাকাও বিক্রি করা কঠিন। এতে দোকান ভাড়া, স্টাফ খরচও ওঠে না। অবরোধের কারণে ফুলের দাম কম। তারপরও কাস্টমার নাই। আগে একটা গোলাপ ৩০ টাকা বিক্রি হতো এখন ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়। তাও বিক্রি করতে পারছি না। অনেক ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অহনা ফুল কুটিরের মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো এখন ৫-৭ হাজার টাকা হয়। ৫০০ টাকার ফুল ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক সময় লোকসান দিয়ে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
ফাতেমা পুষ্পালয়ের কর্মচারী তরিকুল ইসলাম বলেন, হরতাল-অবরোধের এই কয়দিনে প্রতিদিনই কমবেশি লোকসান হয়েছে। আগে মালিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ফুল কিনতেন। এখন ফুল উঠাতেই চায় না। যা উঠায় তাও বিক্রি হয় না। ফুলের তোড়া সাজানো কিন্তু কেনাবেচা নাই।
ইকো ফ্লাওয়ারের আরিফুল ইসলাম বলেন, একেবারেই বেচাকেনা নাই। গত সপ্তাহেও বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজানোর অর্ডার আসতো, এখন কম আসে। একটা বাসর ঘর সাজিয়ে আমরা ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাই। কিন্তু এখন তো সেসব কাস্টমারই নাই৷ অনেক ফুল পচে যায় সেগুলো ফেলে দিতে হয়।
অবরোধের লোকসান আসছে শীতে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন ব্যবসায়ীরা। কেননা শীত মৌসুমে ফুলের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যায়।