সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষাকে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি উভয়কে রাখতে হবে সংকোচনমূলক। কৃষিকে রক্ষাকবচ মনে করে এ খাতে বাড়াতে হবে বরাদ্দ। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের করের আওতায় আনতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে নিম্নআয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও পরিমাণ।

আতিউর রহমান: এই বাজেটে সবচেয়ে বড় গুরুত্ব দিতে হবে স্থিতিশীলতায়। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষাই হবে এ বাজেটের মূল লক্ষ্য। এই স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি- উভয়কে সংকোচনমূলক রাখতে হবে। রাজস্ব আরও কী করে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ ঋণ করে বড় বাজেট তৈরি করার কোনো মানে হয় না। সেজন্য বাজেটে যেমন কাট-ছাঁট থাকবে, আবার বাজেটের জন্য রাজস্বও বাড়াতে হবে। এই রাজস্ব দেশের ভেতর থেকে বাড়াতে হবে, বাইরে থেকেও বাড়াতে হবে। বাজেট সাপোর্ট যেগুলো আমরা বিদেশ থেকে পাচ্ছি, সেগুলো আরও হয়তো বেশি করে নিতে হবে।

প্রণোদনাগুলোর জন্য আরও একটু সময় দেওয়া উচিত। পুরোপুরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত রপ্তানি বা রেমিট্যান্স খাতের সব প্রণোদনা তুলে নেওয়ার যে পরামর্শ আইএমএফ বা অন্যরা দেবে এগুলো একেবারে পুরোপুরি মানা উচিত হবে না। আমি মনে করি ধীরে ধীরে এগোনো উচিত

এবারের বাজেটের একটা বড় দিক হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য আলাদা ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থা করা। প্রতি বছরই থাকে, কিন্তু এবছর আরও বেশি থাকতে হবে। এখানে বিদেশি বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশনগুলো ক্লাইমেট ফাইন্যান্সে বেশি অর্থ দিতে রাজি। সুতরাং, এটি মাথায় রেখে বাজেট করতে হবে।

আতিউর রহমান: রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হবে। নতুন করদাতা যাতে যুক্ত হয়, নজর দিতে হবে সেদিকে। নতুন উদ্যোক্তাদের করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য যেসব খাত ভালো করছে, যেমন- কৃষি ভালো করছে, রপ্তানি ভালো করছে এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাপোর্ট বাড়ানো উচিত। কারণ এরা কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করে।

আতিউর রহমান: কৃষি আমাদের সব সময় রক্ষা করে। সুতরাং, কৃষিকে আরও সমাদর দেওয়ার জন্য রক্ষাকবচ মনে করে কৃষির বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

আতিউর রহমান: কৃষির জন্য আরও অনেক কিছু করা যায়। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষিপণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যেসব মেশিন লাগে, সেগুলো দেশের ভিতরে তাদের প্রয়োজনমতো ছোট ছোট মেশিন তৈরি করা গেলে, দামি মেশিন বিদেশ থেকে আমদানি করা লাগতো না। কৃষিক সত্যি সত্যি উপকৃত হতো। সুতরাং, আমার মনে হয় গবেষণায় বিনিয়োগ করা উচিত। যেমন- কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ধোলাইখাল এগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন নতুন মেশিন আমাদের জন্য তৈরি করতে হবে।

ব্যবসা সম্প্রসারণে কর কমাতে হবে
ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো ‘ইতিবাচক নয়’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চঅগ্রাধিকার দিতে হবে
আগের ‘শিক্ষা’ কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম করারোপের চিন্তা
জাগো নিউজ: আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

আতিউর রহমান: গার্মেন্টস এবং অন্য জায়গায় যে প্রণোদনাগুলো দেওয়া হয়, সেটা এখন প্রতি বছরই কেটে নেওয়ার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় প্রণোদনাগুলোর জন্য আরও একটু সময় দেওয়া উচিত। পুরোপুরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত রপ্তানি বা রেমিট্যান্স খাতের সব প্রণোদনা তুলে নেওয়ার যে পরামর্শ আইএমএফ বা অন্যরা দেবে এগুলো একেবারে পুরোপুরি মানা উচিত হবে না। আমি মনে করি ধীরে ধীরে এগোনো উচিত।

সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার পর ধীরে ধীরে আমরা সেখান থেকে সরে আসবো, কিন্তু এখনই সরে আসবো না। যদি আন্তর্জাতিক কারণে সরে আসতেই হয়, আমরা বিকল্প ইনসেনটিভ তৈরি করবো। যেমন- যদি গার্মেন্টেসের জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভ দশমিক ৫ শতাংশ কমাতে হয়, তাহলে এই দশমিক ৫ শতাংশ ইনসেনটিভ আমি তাকে দেবো বিদ্যুতের দামের মধ্যে, আমি তাকে দেবো ভ্যাট কমানোর ক্ষেত্রে। এভাবে একটার সঙ্গে একটা সমন্বয় করে নেবো।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। নতুন বছরের বাজেটে এ বিষয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা থাকা উচিত?

আতিউর রহমান: সেটার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই বছর ধরে সে প্রস্তুতি চলবে। এবারের বাজেটেও বেশকিছু প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ থাকবে। বিশেষ করে বাজেটের রাজস্বখাতে তো থাকবেই- ট্যাক্স, ভ্যাট কেমন হবে সেটা তো থাকবেই। আরেকটা হলো- ক্যাপাসিটি বাড়ানো যায় কেমন করে। মানুষের ক্যাপাসিটি বিশেষ করে হিউম্যান স্কিল বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ থাকবে। পাশাপাশি বাণিজ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। যারা নতুন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে তারা সবাই মিলে বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে দরবার করবে। এসব ক্ষেত্রে স্মার্ট ইকোমিক ডিপ্লোমেসি কী করে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

আতিউর রহমান: মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে বলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াতে হবে। সংখ্যাও বাড়াতে হবে, পরিমাণও বাড়াতে হবে। এটা শুধু আমরা বলছি না, আইএমএফও বলছে। কারণ এ সময়টায় মানুষ বেশ কষ্টে আছে। এটা সরকারও স্বীকার করছে মানুষ খুবই কষ্টে আছে। সুতরাং, এটার জন্য আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াতে হবে।

আতিউর রহমান: কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য যেসব খাত ভালো করছে, যেমন- কৃষি ভালো করছে, রপ্তানি ভালো করছে এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাপোর্ট বাড়ানো উচিত। কারণ এরা কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, নতুন খাত যেগুলো আছে যেমন- তথ্যপ্রযুক্তি খাত, প্রসেসিং খাত, অনানুষ্ঠানিক যে খাত আছে সেখানে যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে। আর একটা হলো তরুণ নারী-পুরুষ যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা এবং সেখানে সমর্থন দেওয়া। এভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।