অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ শিগগির মিলছে না। চলতি মাসের ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। এখন ওই তারিখেও প্রস্তাব উঠছে না। আবার পিছিয়ে তা গেছে আগামী জুনে।
গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা জানান। তিনি বলেন, জুনে দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব একসঙ্গে উঠবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায়। চতুর্থ কিস্তিতে পাওয়ার কথা ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আমাদের কিছু কাজ আছে। তাই আমরা অত তাড়া করছি না। একটি বিষয় বলি, আপনারা তো ভাবছেন ভিক্ষা করে টাকা-পয়সা নিয়ে আসি। আসলে অনেক শর্ত মেনে এবং আমাদের নিজস্ব তাগিদে অর্থ আনতে হয়। কিছু শর্ত আছে, তা বললেই আমরা পালন করব, এমন নয়।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ইতিবাচক। তাই আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না। আগামী মার্চে কি আইএমএফ পর্ষদে প্রস্তাব উঠছে– এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘মার্চে নয়। আমরা বলেছি যে একটু অপেক্ষা করব। আগামী জুনে দুই কিস্তির প্রস্তাব একসঙ্গে উঠুক।’ সরকারই কি পেছানোর কথা বলেছে, নাকি আইএমএফ– এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার বলেছে। ওরাও চেয়েছে।’
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, শুধু চতুর্থ কিস্তির জন্য নয়, আগের কিস্তিগুলোতেও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। এর পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে গেছে।
চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে এসে গত ১৯ ডিসেম্বর মিশনপ্রধান আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বলেন, চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। চলমান কর্মসূচির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৩০ কোটি করতেও তারা সম্মত।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এরপর তিন কিস্তিতে সংস্থাটি থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে।