ঢাকা, ১৮ শ্রাবণ (২ আগস্ট):
আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপর, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায় আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ওপর। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। কোন সাধারণ শিক্ষার্থী কোনভাবে যেনো হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি। পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলাপ হয়েছে, যে সকল শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিল, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে তাদেরকেও যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনভাবে নাজেহাল না হয়। কারণ সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সাথে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, শিক্ষার্থী যারা তাদের আবেগ নিয়ে আন্দোলনে ছিলেন, কোনভাবে যাতে একটি শিক্ষার্থীও নাজেহাল না হয় আর সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিগত দিনগুলোতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সবার জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুবই দুঃখের। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণ ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবেন এবং এটি গঠিত হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি কোন এক্সপার্টের সহায়তা নেবো। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, হতাহতের ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের অনেকের সাথে গণভবনে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরাও ছিল। তাদের সাথে আমারও আলাদাভাবে কথা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমরা কোনো কিছু চাই না, আমরা বিচার চাই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য, প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য আজ সরকার এবং বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু যদি ক্ষতিগ্রস্ত কেউ হয়, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সে পরিবার যারা সরাসরি তাদের সদস্যদের হারিয়েছেন এবং তারপর এ সরকার ও এ দেশ। এ মৃত্যুগুলো, ঘটনাগুলোকে ঘিরে আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বদনাম করার এক ধরনের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন বিচার চান, সরকারও একইভাবে বিচার চায়। আমরা এটার গভীরে যেতে চাই এবং প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। কারণ এখানে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত। একটি মৃত্যু সরকারের কাছে কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু এবং হতাহতের ঘটনা আমাদের বুকের ওপরে ভারী হয়ে আটকে আছে। এ মৃত্যু এবং হতাহতের ঘটনার জন্য সরকার দুঃখিত। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন ছিল। সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তাদের মধ্যে ঢুকে তৃতীয় পক্ষ যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে জটিল অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
এখনও যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে তাদের উদ্দেশে এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা আবেগ রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের খেয়াল করতে হবে, ইতোমধ্যে আমরা অপব্যবহার দেখেছি সন্ত্রাসী ও তৃতীয় পক্ষ দ্বারা। আবার সন্ত্রাসীরা যদি এটাকে সুযোগ হিসেবে নেয়, আবার তারা যদি হতাহতের, সংঘাতের অবস্থা তৈরি করে, তার দায় কে নেবে? এখানে শিক্ষার্থীদের একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তৃতীয়পক্ষ বসে আছে দেশকে অরাজক পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য যারা আছেন, কাউকেই গুলি করার কোনো অনুমতি ছিল না। সংবিধান এবং আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটাও অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ, মাঠে আইন ভাঙেননি। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনবো। পুরো পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সরকারের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছে, যারা অন্যায় করেছে, সে যেই হোক তাদেরকে আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবো।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাদের আলাদা রেখেছে। সরকার কখনোই তাদের দোষারোপ করেনি। আমাদের সকল বক্তব্যে যেগুলোকে আমরা দোষ দিয়েছি, তার একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নয়, প্রতিটিই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে। আমাদের সকল আইনের প্রয়োগ একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নয়। প্রতিটি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ জুলাই এর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সবার প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন ছয়টি জীবন চলে গেলো। তিনি নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় দাবি পূরণে শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যে রায় এসেছে, তারা হতাশ হয়নি। জুডিশিয়াল কমিশন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী রেখেছেন, সেটি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ অনুপ্রবেশ করে যে তারা পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে, সে জন্য তিনি তার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে এবং সবার প্রতি আহ্বান জানালেন আপনারা সাবধানে থাকবেন। ১৬ জুলাই এর পর আমরা যদি একটু ধৈর্য ধরতাম, একটু সাবধানে থাকতাম তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পেতো না। ছয়জনের মৃত্যুর পর যে বাকি মৃত্যুগুলো হলো এর দায় কে নেবে? কেন উস্কানি দিয়ে এ পরিবেশ তৈরি করা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে, গুজব ছড়িয়ে? সামনের দিনে যে কোনো ধরনের অশান্তি তৈরির জন্য যারা সুযোগ নিয়ে বসে আছে, আরো হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চায় সেই জায়গায় আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে। এই আহ্বান আমি জানাতে চাই।