ঢাকা, ৬ মাঘ (২০ জানুয়ারি) :
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার বন্ধে ডিসিদের আরো তৎপর
হবার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলাপ্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনের প্রথম
অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ডেপুটি কমিশনারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে
বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী
মোস্তফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এরপর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ডিসিদেরকে ‘মাঠ পর্যায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নকারী মাঠ প্রশাসনের প্রাণ’ হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সাড়ে আট থেকে
নয় কোটির কাছাকাছি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচারের একটি বড় ক্ষেত্র এবং অপপ্রচার, গুজব রটানোরও একটি
বড় ক্ষেত্র। আমরা যদি গত ৭-৮ বছরের পরিসংখ্যানে দেখতে পাই, আমাদের দেশে
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে সমস্ত গুজব রটানো হয়েছে, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, স্থানীয়ভাবে
বিশৃঙ্খলা থেকে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা হয়েছে, প্রায় সবগুলোই এই মাধ্যমে করা
হয়েছে। ডিসিদের কাছে আমরা সে বিষয় তুলে ধরেছি, তারা যেন এ ব্যাপারে সবসময় তৎপর থাকেন
এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ডেপুটি কমিশনারবৃন্দ গতবছরের পয়লা অক্টোবর থেকে বিদেশি চ্যানেলের
বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার ক্লিনফিড বাস্তবায়নে যেভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে
সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। এখনও এ ব্যাপারে তাদেরকে নজর রাখতে বলেছি। কেবল
নেটওয়ার্ক যারা পরিচালনা করে তারা যাতে কোনক্রমেই স্থানীয়ভাবে টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে
কোনো অনুষ্ঠান কিংবা বিজ্ঞাপন প্রচার না করে সেটি এবং পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও
আইনের বিধিবিধান অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলেছি।’
এদিন দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদের সাথে
বৈঠকে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এটকো নেতৃবৃন্দ তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
এসোসিয়েশন অভ্ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল সোবহান
চৌধুরী এসময় মন্ত্রীকে একটি স্মারকপত্র দেন। ইকবাল সোবহান বলেন, এটকোর দাবি অনলাইন
নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ভিডিও সংবাদ প্রচারে তথ্য ও সম্প্রচার
মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার বিধান করা এবং আইপিটিভিতে সংবাদ প্রচার এবং ইউটিউবের
মাধ্যমে পত্রিকার সংবাদ প্রচার বন্ধ করা।
তথ্যমন্ত্রী এটকোর দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, ‘সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো আইপি
টিভি সংবাদ প্রচার করতে পারে না। এছাড়া, ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গা
থেকে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে এগুলো সম্প্রচার নীতিমালার পরিপন্থি। আপনাদের আবেদনের
প্রেক্ষিতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একইসাথে যে সমস্ত
সংবাদপত্র ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করছে তাদের সেটার কোনো অনুমতি নেই।
অনুমোদনহীন কিছু করা বেআইনি। সরকার সে ব্যাপারেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
‘সরকার চাহিদার প্রেক্ষিতে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে। সেটিতে
শর্ত ছিলো, প্রিন্ট আকারে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়, সেটাই শুধু অনলাইনে যাবে। সেখানে
ইউটিউব চ্যানেল জুড়ে দিয়ে সংবাদ প্রচার কিংবা টকশো করার কথা নয়। এগুলোর যেহেতু
অনুমোদন নেই, আপনাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মনে
রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাস
করে এবং সে কারণেই তার হাত ধরে দেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের যাত্রাশুরু এবং আজ ৪৫টি
টিভি লাইসেন্স পেয়েছে, দৈনিক পত্রিকা সাড়ে চারশ’ থেকে ১৩ বছরে বেড়ে হয়েছে সাড়ে বারোশ’,
অনলাইন নিউজপোর্টাল কত হাজার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’
এটকো পরিচালকদের মধ্যে এটিএন চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, বাংলাভিশনের আব্দুল
হক, দীপ্ত টিভি’র কাজী জাহিদুল হাসান, সময় টিভি’র আহমেদ যোবায়ের, ডিবিসি নিউজের এম
মঞ্জুরুল ইসলাম, নাগরিক টিভি’র নাভিদুল হক এবং মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মিজান-
উল-আলম এবং খাদিজা বেগম প্রমুখ সভায় অংশ নেয়।