ঢাকা ১৯ মে বৃহস্পতবিার:
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবাসযোগ্য দেশ প্রতিষ্ঠায় ডেল্টা
প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনার অধিকাংশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপর। পানি
সম্পদ মন্ত্রণালয় ও এর অধিন দপ্তর এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে চলছে। জাতির পিতার আজন্ম লালিত
স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম
করে যাচ্ছেন। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশের অর্থনীতি আজ সমৃদ্ধ। চারিদিকে বইছে উন্নয়নের জোয়ার। যদিও জলবায়ু
পরিবর্তনের সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ
রয়েছে। পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ
বাসযোগ্য দেশ নির্মানে সবাইকে কাজ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে শতবর্ষী বাংলাদেশ
ডেল্টা প্লান-২১০০।
প্রতিমন্ত্রী আজ রাজধানীর পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলরুমে "BANGLADESH DELTA PLANE- 2100: Implementation Process
and way Forward" শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’গ্রহণ
একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা বর্তমান প্রজন্মের কাছ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সেরা উপহার। এই মহাপরিকল্পনায়
২০৩০ সালে আমাদের কি অর্জন করতে হবে; ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমানে করনীয় এবং ২০৫০ সাল পর্যন্ত
সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশের পানি সম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের ব্যপ্তি বহুগুণে বেড়েছে
এবং একইসাথে কাজের গুণগতমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত সংস্থাসমূহের
কার্যক্রমে গতিশীলতার সঞ্চার হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ডেল্টা প্ল্যানে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ছয়টি হটস্পট। যেগুলো মূলত পানি ও জলবায়ু
উদ্ভুত অভিন্ন সমস্যাবহুল অঞ্চল। এগুলো হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল আকস্মিক বন্যাপ্রবণ
অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী অঞ্চল এবং মোহনা এবং নগরাঞ্চল। পরিকল্পনায় হটস্পট-ভিত্তিক সমস্যাগুলো
আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা। নদী ও উপকূলীয়
এলাকায়- ভাঙন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকার সমস্যা-স্বাদু পানির প্রাপ্যতা,
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, পরিবেশের অবনমন। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ
অঞ্চলের সমস্যাগুলো হচ্ছে- স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, আকস্মিক বা মৌসুমি বন্যা, জলাবদ্ধতা ও অপর্যাপ্ত নিস্কাশন,
অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিস্কাশন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমস্যাগুলো হচ্ছে- স্বাদু পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত
পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও ক্রমহ্রাসমান জীববৈচিত্র সংরক্ষণ। নদী অঞ্চল ও মোহনার সমস্যা-বন্যা, পরিবেশের অবনমন,
পানিদূষণ, পলিব্যবস্থাপনা ও নৌ-পরিবহন, নদীগর্ভের পরিবর্তন, ভাঙন ও নতুন চর জেগে ওঠা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন; বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ এগিয়ে চলছে। এই মহাপরিকল্পনা অধিকাংশ কাজ
বাস্তবায়ন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওপর দায়িত্ব। মন্ত্রণালয় ও এর অধিন দপ্তর ইতোমধ্যে কার্যক্রম বাস্তবায়নে
নিয়োজিত হয়েছে। নদীর তীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাান। হা্ওরাঞ্চলে টেকসই প্রকল্প গ্রহণের ফলে এবছর কৃষকরা হাসিমুখে
ফসল ঘড়ে তুলতে পেরেছে। উপকূল্ওে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা হচ্ছে। নদী বা খালের ন্যাব্যতার লক্ষ্যে ড্রেজিং,বনায়ন করা
হচ্ছে। বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার
দৃরতা,সাহসিকতার ও অগাধ দেশ প্রেমের জন্য।
তিনি আরো বলেন; নদীমাতৃক বাংলাদেশের পানি এবং টেকসই উন্নয়ন একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের দেশ
একটি দ্রæত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ইতোমধ্যেই বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। নানাবিধ উন্নয়ন ধারায় আমাদেরকে পানির
উপর নির্ভর করতে হয়। সকল ক্ষেত্রে পানির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের টেকসই উন্নয়নের ধারা
অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান সরকার পানি সম্পদ উন্নয়নে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা
প্রদান করবে এবং পানির দূষণ কমাতে সক্ষম হবে। পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তা
ব্যবহারের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নদী ভাঙ্গন রোধ,
বন্যা ও কৃষি ব্যবস্থাপনা, নাব্যতা বৃদ্ধিকরণ ও সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ও ফলপ্রসূ
উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে।
সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম
এনামুল হক শামীম; আরো উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের
সদস্য খান মো.নুরুল আমিন-বিভাগীয় প্রধান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান।