সবুজ বাংলাদেশ প্রতিবেদন :

আব্বু, তুমি চরম ভুল পথে আছ। তুমি তোমার এই মাকে বিশ্বাস করতে পার। তোমার কাছে আমার অনুরোধ, তুমি যদি কখনো তোমার এই মাকে ভালোবেসে থাক, তাহলে তুমি দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ করবে না, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা, অন্যায় কাজে শামিল হবে না। আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ করো। প্রশাসন সদয় হবে।

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছেলে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ান (১৫) আট মাস ঘরের বাইরে। এতদিন ধরে সন্তানের দেখা না পেয়ে হতবিহ্বল মা আম্বিয়া সুলতানা এমিলি ছেলের প্রতি এমন আকুল আবেদন জানান। ছেলের শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি নিজেও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। বুধবার দুপুরে কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বান্দরবানে পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া সন্তানের প্রতি এ আর্জি জানান মা এমিলি।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে ৩৮ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবু বক্করও রয়েছে। এসব নব্য জঙ্গিদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সমাজের জন্য তারা বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা তথ্য পায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর নামে এক তরুণ মার্চে নিরুদ্দেশ হয়। পরে তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। র‌্যাব জানতে পারে নিজ সন্তান আবু বক্করকে তথাকথিত হিজরতের নামে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে জঙ্গিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন তার মা এমিলি। পরে ৫ নভেম্বর এমিলিকে পরিবারের সান্নিধ্যে ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা হয়। আম্বিয়া সুলতানা একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সে চাকরি করতেন।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমিলি বলেন, আমি মাস্টার্স পাস করেছি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে বিমান বাংলাদেশে চাকরি করেছি খণ্ডকালীন। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, চরম ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে সন্তানকে দিয়েছিলাম। এ কারণে আজকে আমার আদরের সন্তান বান্দরবানের পাহাড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় আছে। আমি জানি না আমার সন্তান বেঁচে আছে কি না জানি না আমি কখনো দেখতে পাব কি না এটা আমার মা হিসাবে চরম ব্যর্থতা।

কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা যে ৫৫ জনের তালিকা দিয়েছি, এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুটি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ১০ জনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী দুই সদস্যসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলো-অর্থ সরবরাহকারী আবদুুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (৪০) ও আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (৩২) এবং দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত মো. রনি মিয়া (২৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি উগ্রবাদী বই, নয়টি লিফলেট ও দুটি ব্যাগ জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার আবদুল হাদি ওরফে সুমনের ব্যাপারে খন্দকার মঈন বলেন, তিনি সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। এক থেকে দেড় বছর আগে তিনি জঙ্গি সংগঠনটির শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ ওরফে মানিকের মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সুমন ছিলেন সংগঠনের ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। তিনি তিন মাস আগে সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৯ লাখ টাকা দেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানরত তার দুই প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় সহায়তার কথা বলে টাকাগুলো সংগ্রহ করেন। এ ছাড়াও তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে সংগঠনে চাঁদা দিতেন।
আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ অনলাইন শরিয়াহ গ্র্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি এক থেকে দেড় বছর আগে শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন। তিনিও ছিলেন সংগঠনের একজন ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। তিনি দুই মাস আগে রাকিবের কাছে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৭ লাখ টাকা দেন। এ ছাড়া তিনি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতেন।

গ্রেফতার রনি মিয়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নারায়ণগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এক বছর আগে ছোটবেলার বন্ধু আল-আমিন ওরফে আব্দুল্লাহর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। পরে আল-আমিনের নির্দেশে তিনি গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আবু বক্করকে বান্দরবানে পৌঁছে দেন। রনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও হিজরত সদস্যদের বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে র‌্যাব অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এ এলাকার পাহাড়ের সর্বোচ্চ গড় উচ্চতা প্রায় আড়াই হাজার ফুট। সেখানে বসবাসকারীদের যেন কোনো ক্ষতি সেদিকে আমাদের খেয়াল রয়েছে।