সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন রাজধানীসহ সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে একটির পর একটি সমাবেশ করে আলোচনায় তখন ক্ষমতাসীনরাও পালটা শোডাউনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘যুব মহাসমাবেশ’ নাম দিয়ে শুক্রবার ঢাকায় বিশাল শোডাউন করতে চায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। এই মহাসমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কাছে লোক চেয়েছে যুবলীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক নেতা বুধবার জানিয়েছেন, ‘আজ (বুধবার) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কালকের মহাসমাবেশ সফল করতে সহযোগিতা চেয়েছে যুবলীগ। সেখানে ঢাকার এমপিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় যুবলীগের শীর্ষ নেতারা শুক্রবারের এ যুব মহাসমাবেশে লোক দেওয়ার জন্য সব সংগঠনের নেতাদের অনুরোধ জানান।’
এর আগে ‘মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় একই অনুরোধ করা হয়। ওই সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট থেকে যুবলীগের যুব মহাসমাবেশে কমপক্ষে ১০০ কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করা হয়। সভায় জানানো হয়, যুবলীগের পক্ষ থেকে তাদের কাছে লোকজন চাওয়া হয়েছে। এই অনুরোধ রক্ষা করা দরকার। উত্তরের নেতারা জানান, ঢাকায় ১০০-রও বেশি ওয়ার্ড থেকে মহানগর আওয়ামী লীগ লোক সরবরাহ করলে যুব মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিরোধী বিএনপিকে একটি কঠিন বার্তা দেওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে বুধবার যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কাছে তারা সরাসরি মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে নাম প্রকাশ না করে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা এসব নেতা স্বীকার করেছেন।
যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বুধবার বলেন, আমাদের সময়ে এই ধরনের একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো সহযোগী সংগঠনের কাছে লোক সরবরাহের জন্য বলা হয়নি।
তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে কোনো কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ বা অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসবেন-এটাই স্বাভাবিক। যুবলীগের মহাসমাবেশে অন্যদের কাছে লোক চাওয়া হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একটি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী ইকবালের পর জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের হাত ধরে যুবলীগ সারা দেশে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজপথের আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিল এই সংগঠনটি। সে সময় ঢাকায় সরকারবিরোধী আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যুবলীগ। ১/১১ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনেও অগ্রভাগে থেকে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি।
সেই যুবলীগ এবার তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে লোক চাইছে আওয়ামী লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক নেতা বুধবার বলেন, দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা হলেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যা যুবলীগের অতীত ইতিহাসে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
সব সময় আওয়ামী লীগসহ অন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো যে কোনো কর্মসূচিতে যুবলীগের সহায়তা চেয়ে পেয়েছে। এবারই তার ব্যতিক্রম হলো। যুবলীগ নিজের শক্তিতে একটি সমাবেশ আয়োজন করতে পারছে না।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এ মাসে বর্তমান কমিটির বয়স হচ্ছে তিন বছর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও গত তিন বছরে বর্তমান নেতৃত্ব যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এমনকি এই তিন বছরে তারা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সভাও। বয়সের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিপুলসংখ্যক অভিজ্ঞ যুবলীগ নেতাকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের, তারা ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কাজে নিজেদের দুর্বলতা ও অদক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
আন্দোলনের প্রধান শক্তি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের অবস্থা শোচনীয়। ক্যাসিনোকাণ্ডের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া এবং সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে এ কমিটি। একই অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগে। সংগঠনের এ অবস্থা এবং দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় চরম ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
সূত্র জানায়, যুবলীগ সিলেট মহানগর, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মহানগর, খুলনা মহানগর, বরিশাল মহানগর, রাজশাহী মহানগর এবং ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। তিন বছর হলো সিলেট মহানগর ও জেলাসহ আরও কয়েকটি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি।