রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলাপ করার পরদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও ফোনালাপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় এক ঘণ্টার এই আলাপচারিতা “বেশ ভালো ছিল” বলেও বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের বিষয়েও এসময় আলোচনা হয়েছে, তবে জেলেনস্কি এসময় জোর দিয়েছেন এটা কেবল রাশিয়ার নিয়ন্ত্র থাকা জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।
ফোনালাপের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্পের নেতৃত্বে “এই বছরই স্থায়ী শান্তি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে”।
গত মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে তার বাদানুবাদকে ঘিরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, ফোনালাপের পরের পরিস্থিতি তার থেকে ভিন্ন বলে মনে করা হচ্ছে।
ওভাল অফিসে বৈঠকের পর বুধবারই প্রথমবারের মতো দুই প্রেসিডেন্ট সরাসরি কথা বললেন। যদিও এর আগে সৌদি আরবে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইউক্রেন রাজিও হয়।
যদিও ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়, কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ট্রাম্পের সাথে ফোনালাপের সময় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনের সময় জেলেনস্কি বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামো, রেল ও বন্দর সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোয় হামলা বন্ধ সংক্রান্ত আংশিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন তিনি। তবে তিনি এই সতর্কবার্তাও দিয়েছেন যে মস্কো যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করলে তার দেশ প্রতিশোধ নেবে।
“আমার মনে হয় যতক্ষণ না আমরা (রাশিয়ার সঙ্গে) একমত হচ্ছি এবং যতক্ষণ না আংশিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি সংশ্লিষ্ট নথি পাওয়া যাচ্ছে, সব কিছুই আসলে ভাসমান,” ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রকি ইঙ্গিত করে এই কথা বলছিলেন জেলেনস্কি।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়াকে একটা সমান্তরালে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা ছিল এই ফোনকল। দুই পক্ষের “অনুরোধ ও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে” এটা করা হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা সঠিক পথেই চলছে বলেও জানান তিনি।
“যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘণিভূত হওয়ায়” দুই নেতা তাদের প্রতিরক্ষা কর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে তথ্য বিনিময়ের বিষয়েও সম্মত হয়েছেন বলে রুবিও জানান।
তার বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ট্রাম্পের “ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক সরবরাহ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র” নিয়ে আলোচনা করেছেন; “যুক্তরাষ্ট্র তার বিদ্যুৎ এবং ইউটিলিটি দক্ষতার ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আরও ভালোভাব চালাতে পারে” বলেও ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন।
রুবিওর বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, “আমেরিকান মালিকানা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সর্বোত্তম সুরক্ষা দেবে এবং ইউক্রেনীয় শক্তি অবকাঠামোর জন্য সহায়ক হবে।”
জেলেনস্কি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু তারা শুধু জাপোরিঝিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথাই উল্লেখ করেছে।
জেলেনস্কি বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি অনলাইন ব্রিফিংয়ের সময় ট্রাম্পের সাথে তার কথোপকথনকে “ইতিবাচক”, “খোলামেলা” এবং “খুবই তাৎপর্যপূর্ণ” হিসেবে বর্ণনা করেন।
“আমরা বিশ্বাস করি আমেরিকার সাথে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সাথে এবং আমেরিকান নেতৃত্বে এই বছর স্থায়ী শান্তি অর্জন করা যেতে পারে,” তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন।
সাংবাদিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে জেলেনস্কি বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থান করলে পুতিন সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন না। গত বছরের অগাস্টে কিয়েভ এই অঞ্চলে আচমকা আক্রমণ শুরু করেছিল।
যদিও জেলেনস্কি এবং পুতিন উভয়েই বলেছেন যে তারা জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ করতে সম্মত হবেন। তবে উভয়েই ক্রমাগত হামলার জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে বুধবারের ফোনালাপ প্রায় এক ঘণ্টা চলে।
ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই একটা সমান্তরাল অবস্থানে আনার জন্য তাদের অনুরোধ ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই আলাপচারিতা।”
ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সৌদি আরবে মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মাসে হোয়াইট হাউসে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছিলেন যে তিনি মার্কিন সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞ নন এবং তিনি “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন সাময়িকভাবে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি স্থগিত করেছিল। কিন্তু পরে কূটনীতিকরা সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই আক্রমণ জোরদার করেছে। কিয়েভ অভিযোগ করেছে, রাশিয়া তাদের হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল ক্রাসনোদারের কর্মকর্তারা বলেছেন যে ইউক্রেনের একটি ড্রোন হামলা থেকে একটি তেল ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
যুদ্ধ চলমান থাকার পরও কিয়েভ এবং মস্কো বুধবার বন্দি বিনিময় করেছে। উভয় পক্ষ ১৭৫ জন করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
সোর্স – বিবিসি নিউজ