সোহরাব হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমি জবর-দখল করে ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়ের জামাইয়ের নির্মাণার্ধীন মার্কেট ভেঙ্গে দিলো বনবিভাগ। আর এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক ইউপি সদস্যকে চোর পেটানোর মতোই পিটালেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা। এঘটনায় ওই আহত ইউপি সদস্য বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ করলে বুধবার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
আহত হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার নলোয়া এলাকার হেলাল উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মজনু মন্ডল। তিনি বর্তমানে বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার)।
এলাকাবাসী, আহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার নলোয়া বাজার এলাকায় বনের জমি জবর-দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বোয়ালী বন বিট কর্মকর্তা আবু ইউনুছ ও তার কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজস করে ওই মাকেট নির্মাণ করেছেন স্থানীয় বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মেয়ের জামাই শাহিন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে গত মঙ্গলবার সকালে ওই মার্কেটটি ভেঙ্গে দেয় বনবিভাগের লোকজন। ওই মার্কেটটি ভাঙ্গার পিছনে স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজনু মন্ডলের হাত রয়েছে, এমন সন্দেহে ইউপি চেয়ারম্যান আবজাল হোসেন খান, তার ছেলে নিসাদুল রহমান, ভাতিজা পলাশ, শ্যালক হাসান, দুই পুতুরাসহ কয়েকজন ওই বাজারের একটি দোকানের ভেতর থেকে ইউপি সদস্য মজনুকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে বাইরে বের করে। এসময় তারা সবাই মিলে চোর পেটানোর মতোই ওই ইউপি সদস্যকে এলোপাথারী পেটায়। পরে আশপাশের লোকজন আহতবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ওইদিন ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর বুধবার দুপুরে ওই ঘটনার তদন্তে যান কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, ওই ইউনিয়নের অন্যান্য ইউপি সদস্যরা হাসপাতালে তাকে দেখতে যান। কিন্তু তাকে দেখতে যাননি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারমান আবজাল হোসেন খান। আহত ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের আরো অভিযোগ, গত ছয় মাস আগে একদিন সকালে কে বা কাহারা ৯ লক্ষ টাকার মালামালসহ তাদের মৎস্য খামারের গোডাউন আগুন পুড়িয়ে দিয়েছিল। বছরখানেক আগে তাদের রাতের আধারে বসত-বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গত ১৫ দিন আগে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাদের মৎস্য খামারের রাস্তা বন্ধ করে দেয় তার লোকজন। ইউপি সদস্যকে পেটানোর ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে পূর্বের ঘটনায়ও ওই চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জড়িত বলেও তাদের অভিযোগ।
আহত ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল বলেন, চেয়ারম্যানের মেয়ের জামাই শাহিনের নির্মাণাধীন মার্কেট ভেঙ্গে দিয়েছে বনবিভাগের লোকজন। কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা আমাকে সন্দেহ করে দোকানের ভেতর থেকে তুলে নিয়ে চোর পেটানোর মতো পিটিয়েছেন। এর সুষ্ঠ বিচার চান ওই ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন।
অভিযুক্ত স্থানীয় চেয়ারম্যান আবজাল হোসেন খান জানান, ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল বনের জমিতে স্থাপনা ভাঙ্গা-গড়ার সঙ্গে জড়িত। ওই স্থাপনাটি ভাঙ্গলে স্থানীয় লোকজন তার সঙ্গে ধাক্কা-ধাক্কি করে। আমি তাদের সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি তাকে মারধর করি নাই।
এব্যাপারে জানতে স্থানীয় বোয়ালী বিট কর্মকর্তা আবু ইউনুছ এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম জানান, ওই ইউপি সদস্যকে পেটানোর ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।