হঠাৎ করেই আমাদের দেশে ‘ইউরেনিয়াম’ শব্দটি বেশ উচ্চারিত হচ্ছে। যদিও এ কথা বলা যায় যে, এই মৌল সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেকেরই নেই। ইউরেনিয়াম হল একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ফিসাইল আইসোটোপ যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।এটি খুবই কম পরিমাণে পাওয়ার কারণে ইউরেনিয়ামকে সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমানে ইউরেনিয়াম-২৩৫ আহরণ করা হয়।
ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয় একটি ধাতু। ইউ (U) প্রতীকের এই ধাতুটি পর্যায় সারণির সপ্তম পর্যায়ের তৃতীয় শ্রেণির B উপশ্রেণিতে অবস্থিত এবং এটি সারণির ৯২তম মৌল। উচ্চ ঘনত্বের ইউরেনিয়াম মৌলটি লেড থেকে ৭০ শতাংশ বেশি ঘনত্বের। এর ইউরেনিয়াম-২৩৫ ও ইউরেনিয়াম-২৩৮ নামের দুটি আইসোটোপ আছে। এর রং রুপালি-ধূসর বর্ণের।
জার্মান রসায়নবিদ মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ এই ধাতুটি আবিষ্কার করেন ১৭৮৯ সালে। তিনি ইউরেনাস গ্রহের নামে এর নাম রাখেন ‘ইউরেনিয়াম’। কারণ তখন ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কারের ঘটনা ছিল সবচেয়ে সাম্প্রতিক। ১৮৯৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী সর্ববৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ কাজাখস্তান। এর পরই আছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। ইউরেনিয়াম খুবই দামি একটি ধাতু। পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে এই ধাতু একটি অপরিহার্য উপাদান।
পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে লিটলবয় ও ফ্যাটম্যান নামের যে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ওই দুটি বোমা তৈরিতেই ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল। সামরিক ক্ষেত্রে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার সর্বাধিক। গোলাবারুদের ভেদনক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গোলাবারুদের মধ্যে ইউরেনিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে ট্যাংকের মতো শক্তিশালী যুদ্ধযানকেও ধ্বংস করা সম্ভব। সামরিক ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম ব্যবহারের ফলে তেজস্ক্রিয়ার থেকেও বেশি ভয় হলো রাসায়নিক বিষক্রিয়া।
বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারমাণবিক চুল্লির জন্য ইউরেনিয়াম ধাতুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ১৫০০ টন কয়লা থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব তার সমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র এক কেজি ইউরেনিয়ামই যথেষ্ট। ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কলকারখানা চালনাসহ নগর-বন্দর আলোকিত করা হয়।
ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা যেকোনো প্রাণীর জন্যই ক্ষতিকর। পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াও ইউরেনিয়ামের খনি ও কারখানায় কাজ করার মাধ্যমে যে কেউ ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসতে পারে। এই ধাতুর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে মানুষের কিডনি, মস্তিষ্ক, যকৃত, হৃৎপিণ্ডসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে।