ইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলো আর নেওয়া হবে না। পরীক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
কীভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে সেটি পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তপন কুমার।
পরীক্ষার্থীরা নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে ইতিমধ্যে নেওয়া পরীক্ষা ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার দাবিতে গত চারদিন ধরে আন্দোলন করছেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকের গেট দিয়ে হুড়মুড় করে পুলিশে বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সচিবালায়ে ঢুকে ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বসে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

এরপর দাবি পূরণে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এক ঘণ্টা পার হলে বিকেল ৪টার কিছু আগে পরীক্ষার্থীরা সবাই একযোগে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ২০ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পরীক্ষার্থীরা যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে যেতে থাকেন, তখন ৬ নম্বর ভবনের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন।

এরপর শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক চলাকালে শিক্ষার্থীরা সচিবের কক্ষে সামনে দাঁড়িয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বৈঠক শেষে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এরপর তারা ধীরে ধীরে সচিবালয় ত্যাগ করতে থাকেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের দাবিতে পিএসসি ভবনে বিক্ষোভ
একাদশে ভর্তি: চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে পড়লে সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপত্তিতে পড়েন। বিকেল ৫টার দিকেও কাউকে সচিবালয় থেকে বের হতে এবং সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না।

আন্দোলনরতদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজসহ ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

এর আগে সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সিজান আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পার হয়ে গেল আমরা মাত্র ৭টি পরীক্ষা দিতে পেরেছি। নতুন করে রুটিন প্রকাশ করলে পরীক্ষা শেষ করতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তখন আমরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মোটেও সময় পাবো না।

তিনি বলেন, আমরা চাই যে সাতটি পরীক্ষা হয়েছে, সেই পরীক্ষাগুলো এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।

আরেক পরীক্ষার্থী নবদ্বীপ চৌধুরী বলেন, আমরা গত চারদিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের অনেক ভাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে। এখন পরীক্ষা নিলে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। আর মূল মেধাটা যাচাই হয় অনার্সে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে, নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে আমাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হোক।

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে অংশ নিচ্ছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আরও তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে।

এসএসসি ফলাফলের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ দেওয়া হবে।