ঢাকা, ১৬ অগ্রহায়ণ (১ ডিসেম্বর) :
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন, যুক্তরাজ্যের
গ্লাসগো শহরে ৩১ অক্টোবর হতে ১৩ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু
সম্মেলন (COP 26) এ প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ প্রাপ্তি না হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনেক
দাবি পূরণ হয়েছে। এবারের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ‘গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন’ সংক্রান্ত
বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য ‘গ্লাসগো-শার্ম আল শেখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দ্য গ্লোবাল
গোল অন এডাপটেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ এডাপটেশন কার্যক্রমকে
নিঃসন্দেহে আরও বেগবান করবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত
রাখার লক্ষ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে সদস্য দেশসমূহকে উচ্চাভিলাষী ও শক্তিশালী
পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্যারিস চুক্তির রুল বুক সম্পন্ন হয়েছে এবং উক্ত
চুক্তির আওতায় ‘আর্টিকেল ৬ (মার্কেট এন্ড নন মার্কেট মেকানিজম)’ এর মোডালিটিজ,
প্রোসিডিউরস এন্ড গাইডলাইন্স গৃহীত হয়েছে।
আজ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত
‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৬): প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশসমূহে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী ও
শিল্পোন্নত দেশসমূহ কর্তৃক অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি কপ-২৬ এর বিভিন্ন
ডিসিশন টেক্সট এ অভিযোজন ও প্রশমন অর্থায়নের মধ্যে ৫০:৫০ সমতা আনার বিষয়ে গুরুত্ব
প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক জলবায়ু অর্থায়নে নতুন লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণের নিমিত্ত ২০২২-২০২৪ সময়ের জন্য একটি এডহক ওয়ার্ক প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা
হয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ অন্তত
দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ‘গ্লাসগো লিডার্স
ডিক্লারেশন অন ফরেস্টস এন্ড ল্যান্ড ইউজ’ অনুমোদন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও স্থানান্তর বিষয়ক
বিভিন্ন বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সম্মেলনে এ সংক্রান্ত আলোচনায় কার্যকর
অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ এর ওয়ার্ল্ড লিডার্স সামিটে-এ
অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের পক্ষে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট প্রদান করেন। উক্ত সম্মেলনে
প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (CVF) বর্তমান চেয়ার হিসেবে সদস্য ৪৮টি
সর্বাপেক্ষা বিপদাপন্ন রাষ্ট্রসমূহের পক্ষে অত্যন্ত জোরালো ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন এর সাথে দ্বিপাক্ষিক
বৈঠক করেন। সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের পক্ষে কার্যকর ও বলিষ্ঠ
ভূমিকা পালন করেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মলনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির আলোকে আমাদের
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এখনই ঠিক করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য সকল ধরনের
ঝুঁকি চিহ্নিতপূর্বক তা মোকাবিলায় আমাদেরকে কাজ শুরু করতে হবে। কেবলমাত্র বৈশ্বিক জলবায়ু
অর্থায়নের ওপর নির্ভর না করে আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়
কার্যকর অভিযোজন এবং প্রশমনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আশাকরি
সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সফল হবো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন
নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
সাবের হোসেন চৌধুরী, কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় এমপি, পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড.
কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড.
আইনুন নিশাত, সিভিএফ প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত
সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ
আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।