কয়লাসংকটের কারণে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটেরই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন এখন পুরোপুরি বন্ধ।
কয়লা সরবরাহ না থাকায় দুই সপ্তাহ আগে প্রথম ইউনিটের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায় ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিটটিও। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লা আমদানির দরপত্র নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ কারণে কয়লা আমদানি করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এরপরও চলতি মাসের শেষের দিকে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে কেন্দ্রটিকে উৎপাদনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে
প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় গত বছরের ২৯ জুলাই। এরপর দ্বিতীয় ইউনিটের আরও ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু হয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে। শুরুর দিকে দুটি ইউনিটেই পরীক্ষামূলক উৎপাদন হয়। এরপর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ইউনিট ও চলতি বছরের ২৮ আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ২ ইউনিটের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কয়লা লাগে দৈনিক ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন। সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের সুমিতমো
করপোরেশনের মাধ্যমে আমদানি করা হয় অন্তত ২২ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এর মধ্যে কয়লাসংকটের কারণে দুই সপ্তাহ আগে বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিটের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর একই কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয় ইউনিটের আরও ৬০০ মেগাওয়াটের।
আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে এই মাসের শেষের দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে কোল পাওয়ারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট ) মোহাম্মদ আদনান ইব্রাহিম বলেন, গত সেপ্টেম্বরে উচ্চ আদালতে কয়লা আমদানি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হয়ে গেছে। এখন কয়লা আমদানির অফিশিয়াল প্রক্রিয়া চলছে। তবে আগামী মাসের মধ্যে কয়লা আমদানি করে পুনরায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।