তারিখ ২৯.০৭.২৪
সোহরাব হোসেন, গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক একটি মৎস্য খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। বিগত কয়েক দিন দেশের চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে ওই মাছ লুট করা হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ যৌথ চার খামারী। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য খামারীদের সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার পিপঁড়াসিট কাকচালা এলাকার আবুল কালাম আজাদ ও সেলিম সিকদার, জিংগাহাটি এলাকার আকতার হোসেন এবং গাছবাড়ী এলাকার জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে যৌথভাবে মৎস খামার করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় তারা এ বছরও উপজেলার নলোয়া এলাকায় স্নেহ মৎস্য খামার নামে একটি ও গোসাইবাড়ী এলাকায় সাহেবেরচালা মৎস্য খামার নামে চারটি মৎস্য খামার করেন। এর মধ্যে স্নেহ মৎস্য খামারে নারিশ কোম্পানির এবং সাহেবের চালা মৎস্য খামারে বিশ্বাস পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিমিটেড কোম্পানির ফিড খাওয়ানো হয়। এ লক্ষ্যে খামারীদের সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে চুক্তিনামা করে ওই দুটি কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সাহেবের চালা মৎস্য খামারে বিশ্বাস কোম্পানির নিম্নমাণের ফিড ব্যবহারে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হন খামারীরা। এ লোকসানের কারণে বিশ্বাস কোম্পানীর বকেয়া টাকা দিতে পারছিল না খামারীরা। কিন্তু বিশ্বাস কোম্পানির বকেয়া ৮০ লক্ষ টাকা আদায় করতে ওই খামারীদের আরেকটি স্নেহ মৎস্য খামারে হানা দেয় বিশ্বাস কোম্পানীর লোকজন। গত ১৭ জুলাই থেকে মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে খামারীদের দুরে রেখে জোরপূর্বক মাছ মেরে নিয়ে যায় ওই বিশ্বাস ফিড কোম্পানী। এভাবে বিশ্বাস ফিড কোম্পানী ওই খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ জোরপূর্বক লুটে নিয়েছে বলে খামারীদের অভিযোগ। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ যৌথ চার খামারী ও ৪০ লক্ষ টাকার ফিড সরবরাহকারী নারিশ কোম্পানী। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারী আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে শনিবার ও রোববার তদন্তে গিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারী আকতার হোসেন বলেন, বিশ্বাস কোম্পানির লোকজন যে স্নেহ মৎস্য খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুট করে, সে খামারের সাথে নারিশ কোম্পানির চুক্তিপত্র ছিল। মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দুরে রেখে ওই বিশ্বাস কোম্পানীর লোকজন মাছ লুট করে। অপর খামারী সেলিম সিকদার বলেন, বিশ্বাস কোম্পানী প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার বেশি আমাদের কাছে পাওয়ানা আছে। আমরা বিশ্বাস ফিড কোম্পানী সংশ্লিষ্টদের বলেছি, আরেক খামারের মাছ বিক্রি করে পর্যায়ক্রমে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবো। কিন্তু বিশ্বাস কোম্পানী আমাদের কথা না শুনে জোরপূর্বক বকেয়া ৮০ লক্ষ টাকা আদায় করতে গিয়ে আমাদের স্নেহ মৎস্য খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
আরেক খামারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বাস কোম্পানীর নিম্নমানের ফিড খাওয়াইয়া আমরা ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছি। সে টাকা আমরা ধীরে ধীরে পরিশোধ দিতাম। কিন্তু তারা জোরপূর্বক নারিশ কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারের মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এখন নারিশ কোম্পানীর পাওনা ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়ার উপায় আমাদের নেই। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। অপর খামারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্বাস কোম্পানী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের উপস্থিত রেখে মাছ ধরতে পারতো। তাদের ৮০ লক্ষ টাকার বদলে তারা প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুট করে নিলো। তাদের পাওনা টাকা রেখে বাকী ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আমরা এখন ফেরত চাই।
ওই মৎস্য খামারের মাছ ধরা অন্যায় হয়েছে স্বীকার করে অভিযুক্ত বিশ্বাস কোম্পানীর প্রজেক্ট সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ জানান, খামারীদের অনুমতিক্রমে আমার কোম্পানী ১৭ জুলাই থেকে এখানে মাছ ধরেছে। কিন্তু বার বার বলার পরও খামারীরা এখানে উপস্থিত থাকে নাই। এই কয়েকদিনে ১০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছি, তার সব রশিদ আছে। পরে বসে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে দুই কোটি টাকার মাছ নেওয়ার কথা অস্বাীকার করে ওই কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রাজ্জাক মুঠোফোনে জানান, আমরা ওই খামারীদের কাছে ফিডের মূল্য বাবদ ৮৬ লক্ষ টাকা পাওনা আছি। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল, তারা যদি সাহেবের চালা খামারের মাছ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তাহলে ওই স্নেহ মৎস্য খামার থেকে বাকী টাকার মাছ ধরতে পারবো। এ ধারাবাহিকতায় ওই খামার থেকে মাছ ধরা হয়।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, এ ঘটনায় খামারীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মিমাংসার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।