ঢাকা, ২৯ মাঘ (১২ ফেব্রুয়ারি) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে
নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :

“কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ
করছে জেনে আমি আনন্দিত। কৃষিবিদ দিবসে আমি দেশের সকল কৃষিবিদ, কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট
সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩
ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদের চাকুরি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন, যা এদেশের কৃষি, কৃষক ও
কৃষিবিদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। ফলে অধিকতর মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষি শিক্ষায় আগ্রহী
হয়ে উঠছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পদাংক অনুসরণ করে আমাদের সরকার কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও
বাস্তবায়ন করছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১ লক্ষ ৫১ হাজার ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। কৃষকদের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ
কৃষক উপকরণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। বর্গাচাষিদের জন্য জামানতবিহীন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪ শত ৮৯ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকাকৃষি প্রণোদনা
প্রদান করা হয়েছে।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল।
পক্ষান্তরে, কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার কয়েক দফা সারের দাম কমিয়েছে। সেচের বিদ্যুৎ বিলে ২০
শতাংশ রিবেট প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ ও ইক্ষু খাতে মোট ৮২
হাজার ৮ শত ৬৬ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

কৃষকের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে মোট ১
কোটি ৪০ লক্ষ ৩ শত ৮৭টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হচ্ছে। নিরাপদ শাক-সবজির যোগান ও
কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ ৪১ জেলায় ‘কৃষকের বাজার’ স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকের
কৃষি যন্ত্রের ক্রয়মূল্যের উপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কৃষি
যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কৃষকের জন্য মোট ৭১ হাজার ২৪০ টি কৃষি
যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয। যার মধ্যে অত্যাধুনিক কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার
টিলারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি রয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে কৃষিতে রোল মডেল। আমরা
বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজিতে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, আম উৎপাদনে ৭ম,
পেয়ারাতে ৮ম, পাট উৎপাদনে ২য় এবং রফতানিতে ১ম। আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের
ফলে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২০০৮-২০০৯ সালের ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে
২০২০-২০২১ সালে ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিক টনে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ মৎস্য
উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্বজন স্বীকৃত।
বিগত এক দশকে বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধির হার ৯.১ শতাংশ যা বিশ্বের মধ্যে
দ্বিতীয়। বাংলাদেশে বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে ১ম, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে ৩য় স্থান এবং
বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান যথারীতি ধরে রেখেছে। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে

প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণেও আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাগদুগ্ধ উৎপাদনে আামাদের
অবস্থান ২য়। আমরা ইতোমধ্যে দেশজ উৎপাদন দিয়ে দেশের মানুষের মাংস, ডিম ও দুধের চাহিদা পূরণে
সক্ষমতা অর্জন করেছি। মাংস ও ডিমের মাথাপিছু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
বর্তমানে করোনা মহামারিতে ‘খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল
উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন
অনাবাদি না থাকে’ এই নির্দেশনা পালনে কৃষিবিদগণের কর্মতৎপরতা প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা
বিদ্যমান কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের অভিযাত্রায় কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ এবং নীতি-
সহায়তা ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।

আমাদের সরকারের কৃষি অনুকূল নীতি ও প্রণোদনায় কৃষক ও কৃষিবিদদের মিলিত প্রচেষ্টা
আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে জাতির
পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
আমি ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”