২৫ জুন ২০২৩

ইসলামে যত বিধান আছে, তার অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে আছে আত্মত্যাগের মহিমা ও আর্তের সেবার গৌরব। আদি পিতা হজরত আদম (আ.)–এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল থেকে শুরু হওয়া এই কোরবানির ইতিহাস মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর মহান আত্মবিসর্জনে উজ্জ্বল, যা কিয়ামত পর্যন্ত অম্লান থাকবে।

স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক।

ঈদুল আযহার দিনগুলোতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে আনআম শ্রেণীর (উট, গরু, ভেড়া বা ছাগল) প্রাণী জবাই করাই কোরবানি। এটি ইসলামের একটি নিদর্শন। কোরবানির বিধান আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাহ ও মুসলমানদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত।

কিতাব কী বলে:
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কোরবানি করুন’ (সূরা কাউছার, আয়াত: ২)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: ‘বলুন, আমার সালাত, আমার নুসুক (কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্‌রই জন্য।’ (সূরা আনআম, আয়াত: ১৬২)

সাঈদ বিন যুবায়ের বলেন, নুসুক হচ্ছে- কুরবানী। কারো কারো মতে, নুসুক সকল ইবাদতকেই বুঝায়; এর মধ্যে কোরবানিও অন্তর্ভুক্ত। শেষোক্ত তাফসিরটি ব্যাপকতর।

আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য ‘মানসাক’ এর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেসবের উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদেরর ইলাহ্‌ এক ইলাহ্‌, কাজেই তারই কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।’ (সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৪)

সুন্নাহ:
সহিহ বুখারী (৫,৫৫৮) ও সহিহ মুসলিমে (১,৯৬৬) আনাস বিন মালেক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে- ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো রঙের দুইটি মেষ দিয়ে কোরবানি দিয়েছেন। তিনি মেষের পাঁজরের উপর পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতে জবাই করেছেন।’

আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশবছর মদিনাতে ছিলেন ও কোরবানি দিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ (৪,৯৩৫), সুনানে তিরমিযি (১,৫০৭), আলবানী ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন)

উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের মাঝে কোরবানির পশু বিতরণ করছিলেন। উকবার ভাগে একটি জিযআ (ছয় মাস বয়সী ভেড়া) পড়ল। উকবা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একটি জিযআ পেয়েছি। তিনি বললেন, ‘এটি দিয়ে কোরবানি কর।’ [সহিহ বুখারী (৫,৫৪৭)]

বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পর জবাই করল তার নুসুক (ইবাদত) পূর্ণ হয়েছে এবং সে মুসলমানদের আদর্শ অনুসরণ করল।’ [সহিহ বুখারী (৫,৫৪৫)]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কোরবানি করেছেন, তার সাহাবীবর্গ কোরবানি করেছেন এবং তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে, কোরবানি করা মুসলমানদের আদর্শ।

আলেমদের মতে, কোরবানি করা ওয়াজিব। এটি ইমাম আবু হানিফার মাযহাব এবং এক বর্ণনাতে ইমাম আহমাদের মত হিসেবেও উল্লেখ আছে। ইবনে তাইমিয়া এই মতটিকে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, এ মতটি ইমাম মালেকের মাযহাবের দুইটি অভিমতের একটি কিংবা তার মাযহাবের সুস্পষ্ট অভিমত এটাই। (শাইখ উছাইমীনের ‘আহকামুল উদহিয়্যাহ ওয়ায যাকাত’ পুস্তিকা থেকে সমাপ্ত)

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন বলেন, ‘সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি দিবে।’ (ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (২/৬৬১)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর মাজমাউল ফাতাওয়া গ্রন্থে রয়েছে, অর্থাৎ কুরবানির ব্যাপারে সর্বাধিক স্পষ্ট মত হল, তা ওয়াজিব। কেননা তা ইসলামের সর্ববৃহৎ নিদর্শন। এটা গোটা উম্মতের জন্য ওয়াজিব হওয়ার-ই দাবি রাখে।