খাগড়াছড়ির আম্রপালি সুনাম কুড়িঁযেছে দেশজুড়ে। আর মিয়াজাকি আমের কেজি ৯০০ টাকা। আম্রপালির সাফল্যের পর বিদেশি রঙিন আম চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়ের চাষিরা। ৬০০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব আম। খাগড়াছড়ির উঁচু-নিচু টিলাভূমিতে এখনো থোকাও থোকাও ঝুলছে রঙিন আম। বিদেশি রঙিন আমে সফলতার আশা করছেন শৌখিন চাষিরা।
খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের খেতাব পাওয়া ‘মিয়াজাকি’ বা সূর্যডিম’ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। তার হাত ধরে ২০১৬ সালে এ আমের যাত্রা শুরু। এরপর বিদেশি আম আধিপত্য গড়ে তোলে সবুজ পাহাড়ে। বর্তমানে খাগড়াছড়িতে অন্তত শতাধিক জাতের বিদেশি আম চাষ হচ্ছে।
পাহাড়ে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম, আমেরিকান পালমার, কেন্ট, ইতালিয়ান অস্টিন, অস্ট্রেলিয়ান কেনসিংটন প্রাইড, কেইট, রেড আইভেরি, রেড অ্যাম্পেরর, ব্যানানা ম্যাংগো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, আরটুইটু ও থাই কাঁচামিঠাসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আম চাষ হচ্ছে। প্রচলিত দেশি আমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এ আম।
সরেজমিনে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলছে বিদেশি আম। রঙিন আম চাষে সফল জাতীয় কৃষি পদক পাওয়া হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর পর সফল হয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মংশিতু চৌধুরী। সরকারি চাকরি ছেড়ে আম চাষে সফল হন তিনি। খাগড়াছড়ি সদরের ভুয়াছড়ি এলাকায় গড়ে তোলা তার বাগানে ৪২টি প্রজাতির বিদেশি আম গাছের মধ্যে ২২টিতে ফলন এসেছে। চলতি মৌসুমে অন্তত ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন।
তিনি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় প্রচলিত আমের পাশাপাশি বিদেশি আমে বাগান সাজিয়েছেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অনিমেষ সাহা। তার বাগানে বর্তমানে শতাধিক জাতের বিদেশি আম আছে। অনেক গাছেই ফলন । স্থানীয় কৃষকদের হাতে বিদেশি আমের চারা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন এ উদ্যোক্তা।
অন্য আম যখন কেজি ৩০-৫০ টাকা বিক্রি হয়, সেখানে বিদেশি রেড ম্যাংগোর দাম কয়েকগুণ বেশি। তথ্যমতে, প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয় ৯০০ টাকায়, রেড আইভেরি কেজি ৭০০ টাকা, রেড অ্যাম্পেরর বা চাকাপাত ৯০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু বিক্রি হয় ৬০০ টাকা এবং হ্যানিভিউর দাম কেজি ৬০০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। তবে অনলাইনের মাধ্যমে দেশের শৌখিন ভোক্তারা কিনে থাকেন।
বিদেশি আমের চাষাবাদের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বিভিন্ন জাতের আমের ফলন, মিষ্টতাসহ অন্য বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘শৌখিন কৃষকদের হাত ধরে পাহাড়ে বেশ কিছু রঙিন জাতের বিদেশি আম এসেছে। ভিনদেশি আমের যেসব জাত এখানে এসেছে; সেসব জাত ওইসব দেশে বেশ জনপ্রিয় এবং তাদের ফলনও বেশি। শৌখিন কৃষকেরা এসব বিদেশি জাতের আম চাষ করে ভালো ফলনও পাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে বিদেশি আম চাষ হয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, ‘ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বারি উদ্ভাবিত আম্রপালি, রাংগুয়াই, বারি ফোর চাষ বেশি করে। তবে দাম বেশি হওয়ায় সচেতন কৃষকেরা বিদেশি আম চাষে ঝুঁকছেন।