দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বেঁধে দেওয়া দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোতে। এ অবস্থায় খোলাবাজারে ডলারের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। একসময় ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরে থাকলেও তা কাজে আসেনি। পরে ব্যাংকে ডলারের দর নির্ধারণে দায়িত্ব পায় ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি)।

ব্যাংকে দর নির্ধারণের পর খোলাবাজারে তৈরি হয় ডলার সিন্ডিকেট। ইচ্ছেমতো নেওয়া হতো দর। খোলা বাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে এবার মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে দায়িত্ব দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈশ্বিক সংকটকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ডলার বাজার। ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যেভাবে পারছে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কাই করছে না ডলার ব্যবসায় যুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এক বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সভায় খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে অ্যাসোসিয়েশনকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনে ১১৭ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। এর চেয়ে বেশি দামে ডলার লেনদেন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে অ্যাসোসিয়েশন। প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিন গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা নিশ্চিত করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. শেখ হেলাল শিকদার।

গত বৃহস্পতিবার বাফেদা এবং এবিবি ডলার সংক্রান্ত নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করে। এসময় তাদের আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরই মঙ্গলবার মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশকে খোলা বাজারের ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হলো।

বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ- এবিবির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স (ডলার) কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। তারপরেও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসবো।

আমদানিকারকরা নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছেন না- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি কোনো আমদানিকারকের এরকম অভিযোগ থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া সব বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া যায় না বলেও মনে করেন এই ব্যাংকার।

ব্যাংক সূত্র বলছে, এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা অব্যাহত রেখেছে ব্যাংকগুলো। গত সোমবারও ১২৪ টাকা দরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কিনেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক। আমদানি ও বিদেশি ঋণের দায় মেটানোর চাহিদা ছিল যাদের সেসব ব্যাংকই এভাবে ডলার কিনেছে। যদিও আমদানি দায় মেটাতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখনো ১১১ টাকা। তবে ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে রয়েছে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। কোনো কোনো ব্যাংক অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে ডলারের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ১১৬ টাকা।