বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এই গণহত্যায় উসকানি দেওয়ায় ২৯ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী নাসিফ হাসান রিয়াদের বাবা গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। গত ৫ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডে মিরপুরের বিসিআইসি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র নাসিব হাসান রিয়ান (১৭) মারা যান।
আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম জানিয়েছেন, যেসব সাংবাদিক গত ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গণহত্যা চালিয়ে নেওয়ার উসকানি দেন, অভিযোগে তাদের আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা, ২৯ সাংবাদিক ও দুজন শিক্ষকসহ ৫৩ জনের নাম এসেছে।
অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, আসামিদের প্ররোচনা, উসকানি ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূলের উদ্দেশে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক ও গুম করার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ৮টি অভিযোগ দায়ের হলো। এর আগে ঢাকায় ছয়টি এবং চট্টগ্রামে একটি গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। যেগুলোর ওপর তদন্ত চলমান রেখেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
১. সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, ২. সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ৩. সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ৪. সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ৫. সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ৬. সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ৭. সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ৮. সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ৯. সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ১০. সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ১১. ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ১২. সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ১৩. সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ১৪. সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ১৫. র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, ১৬. পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ১৭. সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, ১৮. আদাবর থানার সাবেক ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ১৯. ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ২০. সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ২১. বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ২২. অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ২৩. আইনজীবী নিঝুম মজুমদার, ২৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।
সাংবাদিকদের মধ্যে আসামি যারা
২৫. সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, ২৬. সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ২৭. জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, ২৮. প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ২৯. একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, ৩০. সাংবাদিক ও টিভি সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী, ৩১. এবি নিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, ৩২. সময় টিভির এমডি আহমেদ যোবায়ের, ৩৩. এখন টিভির বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ, ৩৪. দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, ৩৫. বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ৩৬. সমকালের সাবেক সম্পাদক আবেদ খান, ৩৭. এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন, ৩৮. একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা, ৩৯. একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ, ৪০. একাত্তর টিভির হেড ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মিথিলা ফারজানা, ৪১. ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল হাসান পিন্টু, ৪২. ডিবিসির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ৪৩. ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীস সৈকত, ৪৪. এশিয়ান টিভির হেড অব নিউজ মানষ ঘোষ, ৪৫. ডিবিসির প্রণব সাহা, ৪৬. সাবেক তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি, ৪৭. এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নি সাহা, ৪৮. এটিএন বাংলার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক জ.ই. মামুন, ৪৯. দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, ৫০. চ্যানেল আইয়ের সোমা ইসলাম, ৫১. ইত্তেফাকের শ্যামল সরকার, ৫২. সমকালের অজয় দাশ এবং ৫৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪ (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্র : যায়যায় দিন