মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী প্রতিনিধি
লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়।
এ জন্যই সমাজে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, শিক্ষার্থীরাও যুগে যুগে স্মরণ রাখেন। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। আজ কেন? শিক্ষক সমাজ অবহেলিত, লাঞ্চিত হচ্ছে। দিন দিন যেন শিক্ষক সমাজ তলানীতে নেমে যাচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রম, শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের কতটা উপকারে আসছে, শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়ন, উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে কতটা এগিয়ে যাবে এ শিক্ষা ব্যবস্থা। পারিবারিক বস্ততার কারনে বেশ কিছুদিন লিখার সময় নি, তাই
এব্যপারে লিখার জন্য বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসলাম, লেখাটি শেষ না হতেই কয়েকজন বন্ধু রিং করে বললেন, গরুর মাংশ লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ব্যপারে লিখার জন্য অনুরোধও করেন। তাই থিম পরিবর্তন করে এ বিষয়ে আল্লাহ নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।
ঢাকা, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ, চিটাগাং সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংশের দাম কমলেও রাজশাহীতে পেঁয়াজ সিন্ডকেটের মত কসাইগণ ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে দেদারসে বিক্রি করছেন। গাভী ও মহিষ জবাই করে ষাঁড়/বাছুর গরুর মাংশ বলে বিক্রি করছেন ফলে ক্রেতাসাধারণ প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হাজার হাজার টাকা, মাংশের দোকানে মূল্য তালিকা ঝুলানোর সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। ভোক্তাধিকার, স্থানীয় প্রশাসনের কোন টনক নড়ছে না। এ সুযোগে বীরদাপটে বেশী দামে মাংশ বিক্রি করছেন কসাইগন।
উত্তর শাজাহানপুর, ঢাকায় গরুর মাংশ ৫৯৫/ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন জাত কসাই মোঃ খলিল ভাই তিনি প্রতিদিন ৪০/৪৫ টি গরু প্রতিদিন বিক্রি করছেন। হাজার হাজার মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে মাংশ কিনছেন। কম দামে মাংশ কিনতে পেরে লাখ লাখ মানুষ দোয়া করছেন খলিল ভাইয়ের জন্য। তিনি কম দামে বিক্রি করে রীতিমত ভাইরাল হয়েছেন। তিনি আরও বলছেন, সরকার যদি চামড়ার দাম বৃদ্ধি করেন, তবে আরও ২০/২৫ টাকা কমে মাংশ বিক্রি করতে পারতাম। দেশে এক জোড়া জুতার দাম ৩৫০০/ টাকা থেকে ৭০০০/ টাকা সেখানে গরুর চামড়ার দাম কি করে ৩০০/ ৪০০ হয় এটা আমি বুঝতে পারছিনা।
কেউ কেউ বলছেন খলিল ভাই বাংলাদেশে অন পিস, তার কারনে গরীব মানুষ মাংশ কিনে খেতে পারছেন। তার জন্য হাজার হাজার মানুষ দোয়া করছেন। খলিল কসাই পারলে দেশের অন্য স্থানের অধিক মুনাফাবাজ কসাইগনসহ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কসাইগন পারছে না কেন?
প্রথম শ্রেণীর গোদাগাড়ী ও কাঁকনহাট পৌরসভায় গবাদিপশু জবাই করার পূর্বে ডাক্তারী পরীক্ষা নীরিক্ষা করার কথা থাকলেও তা রহস্যজনক কারনে মানা হচ্ছে না। এ সুযোগে কসাইগণ রাতের আধারে রোগাক্রান্ত, হাড্ডিসার গাভী, বকনা, মহিষ জবাই করে ষাড় গরুর মাংশ বলে বিক্রি করছেন। এ চিত্র জেলার অন্য উপজেলাতেও বলে জানা গেছে। মাংশের মধ্যে সিরিঞ্জ দিয়ে পানি পুশ করে মাংশের ওজন বৃদ্ধি করারও ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে সচেতন মহল দাবী জরুরীভবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন। সেই যাই হউক,
মাংস উৎপাদনে যে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই দেশে গরুর মাংসের দাম এত লাগামছাড়া কেন? মাংশের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সব সময়েই প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর কমবেশি নির্ভরশীল ছিল। ভারত থেকে গরু আসত সারা বছরই। তবে শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে আসত কোরবানি ঈদের আগে। এ দেশের হাটগুলো ভরে উঠত ভারতীয় গরুতে। কিন্তু ২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশনা আরোপ করেন। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এক নির্দেশনার পর সে দেশ থেকে বাংলাদেশে গবাদিপশু আসা একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত থেকে গরু আসত অনানুষ্ঠানিক উপায়ে, বহু প্রাণের বিনিময়ে।
২০১৬ সালে দেশের বেসরকারি থিঙ্কট্যাংক সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভারতীয় গরু আসা বন্ধের পরের পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা করেন। এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক গরু বাণিজ্যের অর্থনীতি: পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চিত্র’। ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে যত গরু আমদানি হতো, বাজারে বছরে এর আর্থিক মূল্য ছিল ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ওই গবেষণায় একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসে। তা হলো, ভারত থেকে আসা গরু বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হয় ৭৭ শতাংশ বেশি দামে।
ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেবার (২০১৫) অনেকে ভেবেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষের কোরবানি করা হবে না। কারণ, গরুর দাম অনেক বেড়ে যাবে। মাংসের কেজি হবে হাজার টাকা। কিন্তু এ দেশের মানুষের সামর্থ্য যতই সীমিত হোক, কখনো কখনো তারা বুদ্ধিমত্তা ও উদ্ভাবন দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। এ ক্ষেত্রেও ছিল তেমনই। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিল বাংলাদেশের খামারিদের জন্য আশীর্বাদ।
সারা বাংলাদেশে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত, কী সমতলে, কী পাহাড়ে দেশি, বিদেশি, সংকর—সব জাতের গরুর খামার গড়ে উঠতে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ শুরু করেন। অনেক তরুণ যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া শেষ করে সেখানে চাকরি না করে দেশে ফিরে গরুর খামার দেন। সমাজে উদাহরণ তৈরি হয়। সংবাদপত্রের পাতায়, টিভি রিপোর্টে, ইউটিউবারদের, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, অন লাইন সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে আসে সাফল্যের কাহিনি।
তবে ভারত গরু পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার পর আমাদের টনক নড়া যৌক্তিক হয়নি। প্রয়োজন ছিল আগেই এ খাতকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা। কেবল সংকটে পড়লেই আমরা সমাধানে মনোযোগী হব, এটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই আমরা স্বাবলম্বী হব, এর আগে হব না?
২০ জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রথম আলোয় ইফতেখার মাহমুদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। ৩ বছরে (২০১৮-২০) দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পশুর উৎপাদন আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ লাখ ৯৯ হাজার বেড়ে হয় ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ গরু, ৪৫ শতাংশ ছাগল। বাকিগুলো মহিষ ও ভেড়া। দেশে জনপ্রতি মাংসের চাহিদা দৈনিক ১২০ গ্রাম। সে হিসাবে বছরে মাংসের চাহিদা ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টন। অর্থাৎ মাংসের উদ্বৃত্ত ১০ লাখ টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া—সব মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২তম।
গরু লালন–পালন আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। একসময় এ দেশের গৃহস্থের ঘরে ঘরে গরু ছিল। ঘরের ছেলেমেয়েদের দুধের চাহিদা মেটাতে ও হালচাষের প্রয়োজনে তাঁরা গরু পুষতেন। ধীরে ধীরে যন্ত্রনির্ভর চাষ জনপ্রিয় হওয়ায় গৃহস্থের গোয়াল থেকে গরু কমতে থাকে। আমাদের দেশি গরুগুলো আকারে ছোট হওয়ায় মাংস ও দুধ কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি বড় গরু লালন–পালন জনপ্রিয় হতে থাকে।
যে দেশে খামার নিয়ে এত ভালো ভালো খবর, মাংস উৎপাদনে যে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, সে দেশের রাজধানীতে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে জেলা শহরে প্রায় একই দাম। শুক্রবার উত্তরের জেলা পঞ্চগড় শহরে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা কেজি, আর দক্ষিণের শহর টেকনাফে বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বিভিন্ন বাজারে মাংশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকায়। গত কোরবানির পর মিয়ানমার থেকে ট্রলারে করে টেকনাফে গরু আসা বন্ধ থাকায় সেখানে অতিমূল্যের একটা কারণ হতে পারে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী বাজরের মুদি দোকান মালিক আব্দুল্লাহ বলেন, পেঁয়াজ, লবন তেল সিন্ডকেটের জন্য আমাদের বদনাম হচ্ছে, ব্যবসা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না । কয়েক দফায় ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছি। কিছু মালের দাম কমে যাওয়ায় ১০/১২ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কিছুদিন পূর্বে আমি ভারত থেকে আসলাম, সেখানে মাংশের কেজি ১৫০/১৮০/ কেজি বিক্রি হচ্ছে, গরুর দামও কমেছে। বাংলাদেশের ঢাকা, বগুড়া, চিটাগাংসহ বিভিন্ন স্থানে ৫৫০ থেকে ৫৯০ টাকা কেজি দরে মাইকিং করে, ফেসবুক লাইভ করে মাংশ বিক্রি করছেন। অথচ মহিশালবাড়ী রেলবাজার, গোদাগাড়ীর বিভিন্ন মাংশ ব্যবসায়ীগণ সিন্ডকেট করে ৭৫০/৭৮০ টাকা কেজি দরে মাংশ বিক্রি করছেন, গাভী, মহিষ জবাই করে ষাঁড়ের ( বছুর গরু) মাংশ বলে বিক্রি করছেন। সেখানে ভোক্তা অধিকার, প্রশাসনের কর্মকর্তাগন দেখতে পান না। তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমান অভিযান পরিচালনা করেন না কেন?
মাংশের বাজারের এমন পরিস্থিতি কেন বা দামের তরতাম্যের কারণ জানতে চাইলে বাজার মনিটরিংকে দায়ী করেন ক্রেতাসাধারণ। তারা বলছেন, বাজার মনিটরিং হয় না, রহস্যজনক কারনে মাংশের বাজারে? কোন অভিযান পরিচালিত হয় না, গরু জবাই করার পূর্বে কতৃপক্ষ কোন খোঁজখবর রাখেন না, কোনও শৃঙ্খলা নেই। যার যেমন ইচ্ছা দাম হাঁকাচ্ছেন। মানুষ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গরুমাংশের কেজি হবে ১ হাজার টাকা।
কীভাবে, কোন যুক্তিতে গরুর মাংসের দাম এত বেশি হতে পারে, সে প্রশ্ন তুলতে চাই।
যখন সীমান্ত পার হয়ে ভারত থেকে গরু আসত, তখন তো এত দাম ছিল না। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে ১ কেজি গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। মাত্র ৫ মাস আগে গত অক্টোবরে গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শবে বরাতের দিন একলাফে কেজিতে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। আর সংযমের মাস রমজান সামনে রেখে বাড়ানো হয় আরও ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
গত কয়েক বছরে গরু পালন আর প্রান্তিক খামারিদের হাতে নেই। রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংসদসহ বড় বড় ব্যবসায়ীর হাতে চলে গেছে। তাঁরাই এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এখন নিজেরা উৎপাদন করে দাম যখন সীমার মধ্যে থাকার কথা, তখন উল্টো অসীমে পৌঁছে গেল! এর আগে সিটি করপোরেশন একাধিকবার গরু ও খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি তদারকির অভাবে। ব্যবসায়ীরা পাত্তা দেননি।
প্রশ্ন হচ্ছে, মাংসের দাম কেন নির্ধারণ করে দেওয়া লাগবে? ১ কেজি মোটা চালের দাম ৫৬ টাকা। একজন দরিদ্র মানুষকে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতে হলে ১৬ কেজি চালের সমান টাকা পরিশোধ করতে হবে। এক কেজি মাংসে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের বড়জোর দুই বেলা চলে। এর জন্য ৭৫০টি টাকা ব্যয় করা কয়জনের পক্ষে সম্ভব। ধরা যাক, একজন বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক ২২ হাজার টাকা বেতন পান। তাঁর পক্ষেও অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায় ২ কেজি গরুর মাংস কেনা কত কঠিন। মাংশ ব্যবসায়ীরাই বলছেন, দাম বেশি বলে বিক্রিও কমে গেছে। লোকে এখন গরুর মাংস না কিনে সোনালি মুরগি কিনছেন। তাহলে মনগড়া দাম বাড়িয়ে লাভ কী, বর্তমান সরকারে বেকায়দার ফেলতে সিন্ডিকেটের তৈরী করে অন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মত গরুর মাংশ ব্যবসায়ীগন কাজ করছেন।
সাধারন মানুষ কাঁদছে, তুমি মানুষের হয়ে পাশে দাঁড়াও, কে দাঁড়াবে, কয়জন দাঁড়ায় গরীব মানুষের পাশে, আজ থেকে ৩ দশক আগে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৪০ টাকা। মনে আছে, যখন স্কুলে পড়তাম, আমার জন্মস্থান রাজশাহী গোদাগাড়ী, মহিশালবাড়ী বাজারে মাত্র ২/১ গরু জবাই হতো। তখন চালের কেজি ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। তখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কম ছিল। এখন ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সরকারি হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫১১ ডলার। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতা সামান্য বাড়লেই সবকিছু আগুন দামে কিনতে হবে কেন?
কেন গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা কেজি? মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, হাট কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ইজারা আদায় করছেন। যেমন গাবতলী, রাজশাহীর সিটি হাট, কাঁকনহাট গরুর হাট ইজারা নেওয়ার শর্ত হলো, প্রতিটি গরুর সরকার নির্ধারিত খাজনা হবে ২০০ টাকা। কিন্তু এ শর্ত না মেনে ইজারাদারেরা অবৈধভাবে গরুপ্রতি চার বা পাঁচ হাজার টাকাও আদায় করছেন। এভাবে একটি গরু শহরের ভেতরে তিনটি হাটে স্থানান্তরিত হলেই গরুর দাম বেড়ে যায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়ে মাংসের দামের ওপর। তাদের কথা, এ চাঁদা কমানো গেলে মাংসের দামও কেজিতে ১০০–১৫০ টাকা কমানো যাবে। প্রভাবশালীদের মন্ত্র, এমপি, মেয়র,চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ভ্রাতা কিংবা শ্যালক—এই ইজারাদারদের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
অপর দিকে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বাজারে গোখাদ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে বেড়ে গেছে গরুর উৎপাদন খরচ। সরকার গোখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলে বাজারে মাংসের দাম কমে আসবে। এর বাইরে রয়েছে পশুর ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, চামড়ার দাম কমে যাওয়া, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। প্রকৃতপক্ষে খামারির কাছ থেকে কসাই পর্যন্ত একটি গরু পৌঁছাতে তিন-চার হাত বদল হয়। প্রতি হাত বদলে বাড়ে গরুর দাম।
অর্থনীতির ভাষায় বাজার নিয়ন্ত্রন বলে একটি কথা থাকলেও সেটা আমাদের দেশে কাজের কাজ কিছুই হয় না। আর কত চিৎকার করলে উন্নত হবে বাজার ব্যবস্থাপনা?
আরেকটি তথ্য হচ্ছে, গত কয়েক বছরে গরু পালন আর প্রান্তিক খামারিদের হাতে নেই। রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংসদসহ বড় বড় ব্যবসায়ীর হাতে চলে গেছে। তাঁরাই এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ দুলাল টেলিফোনে জানালেন, সেখানে গরুর মাংসের কেজি বাংলাদেশি টাকায় ৫৫০ টাকা। প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি তবারুকুল ইসলামের তথ্যমতে, ওই শহরে প্রতি কেজি মাংস ৪ দশমিক ৯৯ পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে, বাংলাদেশি টাকায় যা ৫৬০ টাকা। নিউইয়র্কের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানালেন, সেখানে মাংস, দুধ, ডিমের দাম সব সময় কম থাকে। কারণ, সরকার এসব খাতে প্রচুর ভর্তুকি দেয়। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৫২০ টাকার মতো। কানাডা থেকে লেখক, গবেষক মোস্তফা চৌধুরী জানান, সেখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ১৩ কানাডীয় ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৮৮০ টাকার মতো।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওমান, কানাডার মানুষের মাথাপিছু আয় কত? আর আমাদের মাথাপিছু আয় কত?
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জাতীয় সংসদে কেবল বিরোধী দলের সদস্যরাই কিছু কথা বলেন। সরকারি দলের সাংসদদের কোনো কথা শোনা যায় না। তারা মুখে মাস্কটা দিয়ে বসে থাকেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ হয়তো এর কারণ। কিন্তু সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে কিছু বলতে মানা আছে কি?
এখনই উদ্যোগ না নিলে গরুর মাংসের কেজি আর ৭৫০ টাকা থেকে নামবে বলে মনে হয় না। এ দেশে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে সাধারণত আর কমে না।
প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যতম একটি অবদান হচ্ছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির প্রাণী সরবরাহের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। খুশির খবর হলো, এ বছর চাহিদার তুলনায় কোরবানির জন্য উপযোগী প্রাণীর উৎপাদন বেশি। যেমন এ বছর প্রাণীর চাহিদা হলো ১ দশমিক শূন্য ৪ কোটি, বর্তমানের সরবরাহের সংখ্যা ১ দশমিক ২৫ কোটি। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা প্রায় ৪৮ দশমিক ৪ লক্ষ (ডিএলএস, ২০২৩)।
বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গরুর মাংসের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। যেমন বাংলাদেশে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৬ দশমিক ৯৪ ডলার, মালয়েশিয়াতে ৫ দশমিক ৩৭ ডলার, নেপালে ৪ দশমিক ২৯ ডলার এবং পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৬০ ডলার (সূত্র: বাংলাদেশ বিফ প্রাইজ, গ্লোবাল প্রোডাক্ট প্রাইজ ২০২৩, বিফ প্রাইজ, সিপিডি ২০২৩)।
কাজেই আমাদের দেশে মাংস উৎপাদনের খরচ কমানোর ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে এখন শিক্ষিত যুবক ও নারীরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু পালন করছেন।
মাংস উৎপাদনের জন্য বর্তমানে শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান সংকর জাতসহ আরসিসি ও দেশি জাতের গরু পালন করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে মাংসের দাম আশপাশের দেশ থেকে কেন বেশি, এবং কীভাবে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব?
আমরা জানি, উন্নত জাতের গরু দেশীয় জাতের গরুর তুলনায় কম খাদ্যে দ্রুত ওজনে বৃদ্ধি পায়। গরুর জাত বাছাইয়ের ওপর এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ নির্ভর করে। মাংসের দাম কমাতে হলে এর উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
মাংস বাজারজাতকরণে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য কোল্ডস্টোরেজ সুবিধাসহ আধুনিক জবাইখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পশু পরিবহনব্যয় কমানোর লক্ষ্যে পথের অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা দূর করতে হবে, চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আন্তে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে এবং তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। ইচ্ছাকৃত দাম বাড়া রোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হলে প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। কাজেই এখন থেকে দীর্ঘমেয়াদি প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন, তথা মাংস উৎপাদনের জন্য অধিক মাংস উৎপাদনশীল গরু পালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করলে এই সেক্টরে প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব।
এ অবস্থায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শিগগিরই সব পক্ষকে ডেকে, ক্যাবকে রেখে একটা সত্যিকারের গণশুনানির আয়োজন করতে পারে। সেখানে সবার কথা শুনে গরু–মহিষসহ সব মাংসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিড়ালের গলাই ঘন্টা বাঁধবে কে?