আমাদের সাথে সবুজ বাংলাদেশ অফিসে উপস্থিত আছেন এই সময়ের প্রচার বিমূখ মানুষ, চলচ্চিত্রে ভিন্ন ধারার গল্পের উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র পরিচালক এইচ আর হাবিব।  মুখোমুখি আছেন, সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার বিনোদন বিভাগ থেকে আহমেদ কাওছার।
স,বাংলাদেশ – স্বাগতম হাবিব ভাই। কষ্ট করে আমাদের অফিসে আসার জন্যে। কেমন আছেন।
হাবিব – হ্যা ভাল আছি ।
স,বাংলাদেশ – যদি আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু বলেন।
হাবিব – দেখুন চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক কথা বলবার থাকলেও —
স,বাংলাদেশ – না না, কাউকে না কাউকে তো বলতে হবে। তাই না। অনেকেরই জিজ্ঞাসা আগামীতে কোন ধরনের চলচ্চিত্র বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
হাবিব – জীবনের গল্প, জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প। যা আমরা ব্যক্তি জীবনে ব্যস্ততার কারণে ঘুছিয়ে রাখতে পারি না। তা গুছিয়ে নির্মাতারা সেলুলয়েডে সামনে ধরলেই উপভোগ্য হয়ে উঠে । তবে কি ভাবে নির্মাতারা সামনে আনছেন,পেজেন্টেশন কৌশল কি, সেটাই বড় বিষয়।
স,বাংলাদেশ – সম্প্রতি রিলিজ হওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে অনেকেই ক্ষয়-অবক্ষয় এর কথা বলছেন। আপনি বাংলাদেশের এই সময়ের সংস্কৃতির বিবর্তন রুট লেভেল থেকে দেখে আসা কর্মী। আমরা বলতে পারি কাদা মাটি থেকে। আপনার দৃষ্টিতে এই পরিবর্তন শুভ বার্তা বয়ে আনবে কি ?
হাবিব – এত শক্ত প্রশ্ন শুরুতেই করছেন, পাঠক খেই হারাবে না তো।
স,বাংলাদেশ – না ঠিক আছে শুরুটা হউক।
হাবিব – দেখুন বিবর্তন বলতে যে ভাবে বুঝাতে চাইছেন আমি সেই দিকটায় যাতে চাই না।
আমরা বিবর্তন বলতে একটি ব্যপক পরিবর্তিত অবস্থার কথাই সব সময় মনে করি।
কিন্তু সংস্কৃতির বিবর্তন আসলে তেমন মোটা দাগের নয়। যদি শুভ বিবর্তন বলতে শরীর থেকে ময়লা ঝড়ে যেমন ত্বকের গ্রামার টোন বেড়োয়। আবার ক্ষয়ের পরিমান যদি হাড় মাংশ ভেদ করে, তা তো শুভ হয় না।
আমাদের জনজীবন এবং শিল্প-সংস্কৃতিত চাকচিক্যের বিবর্তন এসেছে বেশীর ভাগই অশুভ’র ছোয়ায়। আমরা কর্পোরেট সংস্কৃতিকে স্বাগত জানিয়েছি নিজেদের কয়েক সহস্রাব্দের মূল্যবোধকে গলা টিপে। মানুষ হাসলেই তা বিনোদন শিল্পের সংগার মধ্যে পরে যায় ইদানিং। তাতে শরীর আবৃত বা অনাবৃত যাই থাক, তা দেখে হাসি আসে কি না সেইটাই বড় বিষয় । আর তাই এই সময় বিনোদনের সংগা হয়ে দাড়াচ্ছে । কিন্তু সুস্থ্য মানবিক গুণের মানুষ সমাজে বেড়ে উঠল কি না, তা কর্পোরেট সংস্কৃতির দেখার বিষয় না। তাদের কিছু যায় আসেও না। কি করে পন্য বিক্রি বাড়বে তাই মূখ্য। ফলে সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তন এর ফলাফল এত অল্প পরিসরে চিহ্নিত করা যাবে না। তবে এইটুকু অন্তত বলা যাবে, যেভাবে উপস্থাপন হচ্ছে তা শুভ নয়। আবার সবাই অশুভর পথে দৌড়ে যাচ্ছে তাও না। চলচ্চিত্রে সম্প্রতি সফল ছবি গুলো দেখলে দেখবেন কেউ বা মিথ নিয়ে কেউবা কোন অস্তিত্ব আছে এমন প্রেক্ষাপটের গল্প নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। কোথাও মিথ রয়েছে আবার কোথাও আমাদের গল্পের ঢঙ রয়েছে। ফলে সফল হয়ে ঘুরে দাড়াচ্ছে চলচ্চিত্র।
স,বাংলাদেশ – তাহলে পরিবর্তন টা কি ভাবে আমাদের সামনে আসছে।
হাবিব – উপস্থাপনের ধরনে। নির্মাতা উপস্থাপন কৌশলে। তাতে চরিত্রের আত্মিক উপস্থাপন, প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিমিতি বোধ। সব মিলিয়ে আধুনিক করে তুলছে সমসাময়িক চলচ্চিত্রগুলোকে। হয়ে উঠছে আলাদা ধরনের গল্প।
স,বাংলাদেশ – আপনাকে মাঝে মাঝেই ফেসবুকে স্টাট্যাস দিতে দেখি ক্লোন গল্প নিয়ে ছবি প্রেক্ষাগৃহে পরিবর্তিত এই সময়ের দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।
হাবিব – হা তাই তো হচ্ছে। কেন দর্শক গল্পের যৌক্তিক প্রয়োজনীয় উপকরণ নয় এমন কিছু দেখবে। গল্পের প্রয়োজনে যতটুকু দরকার তাই ব্যবহার করা উচিত। কেন ঘড়ি ধরে ১০ মিনিট ফাইট ৫ টা গান, ৬ টা অসংগতিপূর্ণ ফুটেজ জুড়ে দিতে হবে। তাতে আরোপিত গল্পই মনে হবে। তা দর্শকের খুব কাছে গিয়ে স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ বর্তমানের দর্শক এবং দুই দশক আগের দর্শকের জীবনাচারণ এক নয়। মানুষের কাজের ধরণ, গ্রহণ বর্জনের মানষিকতার পরিবর্তন হয়েছে অনেক, তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
স,বাংলাদেশ – এমন পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলো কোন ভূমিকা রাখতে পারে কি।
হাবিব – তারা ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু পারছেন কই। তাদের ভূমিকা রাখার মত কোন পরিস্থিতি বর্তমানে রয়েছে, আমরা দেখছি না। তারা তো নিজেদের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। দেখুন এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বড় কর্মযজ্ঞ সরকার এর সদিচ্ছার উপড় নির্ভর করে । যার দ্বায়িত্ব পালন করার কথা ছিল বিএফফিসি’র। কিন্তু বেতন ভাতার বায়রে তাদের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন আছে এমন মনে হয় না। যদিও সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় তার কিছুটা শুরু হয়েছে। ফিল্ম এবং চলচ্চিত্র ইনিষ্টিটিউট হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহ আধুনিক হতে শুরু করেছে। এখন প্রয়োজন চৌকস অভিনেতা, নির্মাতা, টেকনিশিয়ান। সবার আগে যা প্রয়োজন শ্রম বিক্রির মানষিকতা পরিহার করা। চলচ্চিত্র শিল্প তবে সপ্তকলার শিল্প। শুধুমাত্র পন্য উৎপাদনের শিল্প নয়। এই শিল্পে উপলব্দি বিনিয়োগ করতে হয়, শুধু শ্রম নয়।
স,বাংলাদেশ – এখন তো অনেকেই ভাল করছেন।
হাবিব – তা করছেন। তবে সর্বপরি ভালোর যাত্রায় ধারাবাহিক থাকাটা জরুরী। দুই একজনের হঠাৎ ভাল করা দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প টিকে থাকবে না। এখানে একটি কাম্য মান প্রয়োজন। সব কিছুর আগে ক্রিয়েটিভ আড্ডা প্রয়োজন। সেখানে নির্মাতা, অভিনয় শিল্পীরা সাথে চলচ্চিত্রের সাথে সবায় আড্ডায় মিলিত হবে। যেই ভালোর উপড় দাড়িয়ে ; আরো ভাল করা চেষ্টা করতে হবে। তা যেন শুধুমাত্র হাক ডাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমি হতাশ নই, হয়ত সহসা এমন দেখতে পাব আমরা।
স,বাংলাদেশ – কিন্তু আড্ডা দেবার জন্য তো ফিল্ম ক্লাব রয়েছে।
হাবিব – সেখানে কোন ধরনের আড্ডা হয় তা আমাদের অজানা নয়। আমি আবারও বলছি ক্রিয়েটিভ আড্ডা হতে হবে। একে অন্যের সাথে সকলে চলচ্চিত্রের প্রতিবন্ধকতা উতরে যাবার উপায় খুজবে। অবসাদে রিক্রিয়েশন হলে দোষের নয়। কিন্তু ক্লাবের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র রিক্রিয়েশন নয় মনে রাখতে হবে।
স,বাংলাদেশ – সরকারের সদইচ্ছার কথা বলছেন। সরকারী অর্থে তো ছবি হচ্ছে। অনুদান নিয়ে কি বলবেন।
হাবিব – তেমন কিছু বলব না। শুধু এইটুকু বলব। বর্তমান অনুদান বাছাই পদ্ধতি একেবারেই বাজে পদ্ধতি। এই ভাবে জনগনের অর্থ অপচয় না করাই শ্রেয়।
স,বাংলাদেশ – অনুদানের বেশীর ভাগ ছবিগুলো তো ঠিকভাবে প্রেক্ষাগৃহে আসছে না।
হাবিব – ছবি বানানো শেষ না হলে কি ভাবে প্রেক্ষাগৃহে আসবে। অনুদান কি সবই উপযুক্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।
স,বাংলাদেশ – চলচ্চিত্রে নায়ক নায়িকাদের নামে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এইটা কি ভাবে দেখছেন।
হাবিব – তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না করি। তবে দৃষ্টিকুটু নামের একটি শব্দ এখনও জীবিত আছে। যারা পেয়েছেন, তারা কি ভাবে পেয়েছেন সেইটাই বিষয়। যোগ্যতা থাকলে তো কোন প্রশ্ন থাকবার কথা নয়।
স,বাংলাদেশ – বর্তমানে চলচ্চিত্রের প্রোমোশনে অনলাইন ব্যপক ভূমিকা রাখছে, একজন ফিল্ম অনলাইন এক্টিভিষ্ট হিসেবে কি ভাবে দেখছেন।
হাবিব – ২০১২ সাল থেকেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে সঠিক ট্রাকে তুলতে আমরা বাংলাদেশ অনলাইন ফিল্ম এক্টিভিষ্ট এসোশিয়েশন – বোফা’র মাধ্যমে ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। সারাদেশে আমরা চলচ্চিত্রের পরিবর্তনগুলোর সুফল নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছি। ১০ দফা দাবীতে সারাদেশে বোফা পোষ্টার সেটেছে । বর্তমানের অনেক পরিবর্তনগুলো তার ফলাফল বললে ভুল হবে না ।
চলচ্চিত্র নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের যে সূত্র তা কিন্তু অনলাইন থেকেই। হয়ত তা স্বীকার করতে আজ অনেকেই ইতস্ততায় ভোগেন, অনলাইন এক্টিভিষ্টদের কথা বলতে। আমি মনে করি চলচ্চিত্রের মানুষেরা তা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ভুলে গেছেন।
আপনি আশ্চর্য হবেন তখন আমরা সবায় বোফার ছত্রছায়ায় নিজেদের কাছ থেকে আর্থিক সহোযোগিতায় এই আন্দোলন করেছিলাম। আমি সেই সকল অনলাইন বীরদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ।
পরবর্তীতে অনলাইন এক্টিভিষ্টদের অনেকেই এই প্রোমোশনের বিষয় সামনে এনেছেন, তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন পরিবর্তন পরিবর্ধন করে এবং বিশ্ব বাস্তবতার সংস্পর্শে এসে বর্তমানের অনলাইন প্রোমোশন রপ্ত করেছেন। যার আগ্রহটা জন্মেছিল অনলাইন ফিল্ম এক্টিভিষ্টদের পদচারণার মাধ্যমে।
এইটা ভালোর দিক যে, চলচ্চিত্রের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ প্রোমোশনও আধুনিক হচ্ছে। দর্শকদের হলে টানতে পারছে ।
স,বাংলাদেশ – আপনার ছবি ছিটমহল ইংল্যান্ডের লিফট অফ আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফ্যাষ্টিভ্যালে টপ ফাইভে স্থান করে নিয়েছে। আপনার আসছে ছবি জলকিরণ ও কি তেমন অর্জন প্রত্যাশা করেন।
হাবিব – অব্যশই প্রত্যাশা তো থাকবে। তবে সবে পোষ্ট প্রোডাকশনে গেছে জলকিরণ। দেখা যাক।
স,বাংলাদেশ – আপনি অফট্রাকের একেবারেই অন্যরকম গল্প নিয়ে কাজ করেন। তাতে কি বিনোদন থাকা জরুরি মনে করেন।
হাবিব – কেন না আপনি একজনকে হেসে বসতে না বললে, সে কি বসবে। আপনার কথা শুনবে, গল্প দেখবে। ফলে আমি শুরুটায় দর্শককে আনন্দ দিয়ে গল্পে টেনে নেই। আমি আমার ঢং এ গল্প বলি। তা হয় বিনোদন সহযোগে শিক্ষা। ফলে বিনোদনের মাধ্যমেই শিক্ষা হয়।
স,বাংলাদেশ – কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন। থিয়েটার না চলচ্চিত্র।
হাবিব – দেখুন দুই মাধ্যমই মানুষের কথা বলে জীবনের কথা বলে,কল্যাণের কথা বলে। সংক্ষেপে বললে পার্থক্য শুধু দর্শক থিয়েটারে চোখে দেখার বায়রে কল্পনায় আরও কিছু চিন্তা করে নিতে হয় । চলচ্চিত্র তা দেখিয়ে দেয়।
স,বাংলাদেশ – শেষ প্রশ্ন আপনার নিকট। জলকিরণ রিলিজ হবে কবে নাগাদ।
হাবিব – চেষ্টা করছি দ্রুত। তবে পোষ্ট প্রোডাকশনে সময় লাগবে। এই বছরের শেষে আসবে হয়ত।
স,বাংলাদেশ – ধন্যবাদ আপনাকে।
হাবিব – ধন্যবাদ আপনাকে সাথে পাঠকদের।