০২ আগস্ট ২০২৩
ভারতের কাশ্মীর রাজ্যের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ও রাজ্য দুই ভাগ করা–সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলার শুনানি অবশেষে বুধবার সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ চার বছর পর ওই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতার তুল্যমূল্য বিচার শেষে সুপ্রিম কোর্ট এ মামলায় রায় দেবেন। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এ মামলা লাগাতার শুনবেন বলে জানিয়েছেন।
এই বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতি হলেন সঞ্জয় কিসান কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্য কান্ত। মোট ২০টি আবেদন জমা পড়েছে। গত ১১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে সব পক্ষকে তাদের আবেদন একত্র করে জমা দিতে। ওই দিনের পর আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
সুপ্রিম কোর্ট শনি ও রোববার বন্ধ থাকে। সোম ও শুক্রবার অন্যান্য বিষয়ের মামলা শুনবেন। সপ্তাহের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই সাংবিধানিক বেঞ্চ শুধু কাশ্মীর মামলা শুনবেন বলে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন। এভাবে টানা ৩৩ দিন শুনানির মধ্য দিয়ে অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছিল।
জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ কেন অসাংবিধানিক, কেন কোনো পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যায় না—আবেদনকারী আকবর লোনের আইনজীবী হিসেবে বুধবার সারা দিন ধরে সেই বিষয়ে সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেন কপিল সিব্বাল।
কপিল সিব্বাল শুরু করেন এইভাবে, আজকের দিনটি নানা দিক থেকে ঐতিহাসিক। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানসম্মতভাবে দেশের সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কি না, তা বিচার করবে। জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখা যায় কি না, তারও বিচার করবে। এই মামলা আরও ঐতিহাসিক এই কারণে যে পাঁচ বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে কোনো সরকার নেই, জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আদালত চার বছর পার করেছে এই মামলা শুনতে। যে অনুচ্ছেদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা মুছে দেওয়া হলো। বিচার করবে সেই প্রক্রিয়া ঠিক ছিল কি না।
কপিল সিব্বাল আরও বলেন, সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ (রাষ্ট্রপতির শাসন) জারি না করে কোনো রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায় কি না কিংবা বিকল্প সরকার গঠনের উপায়ের খোঁজ না করে বিধানসভা জিইয়ে রাখা যায় কি না, এসব সাংবিধানিক প্রশ্নও এই অবসরে উঠে আসবে। সেই কারণেই এই শুনানি এত ঐতিহাসিক।
শুনানির শুরুতেই কপিল সিব্বাল এজলাসে বলেন, ‘একটা বিষয় শুরুতেই স্পষ্ট করে দিতে চাই। জম্মু-কাশ্মীরের ভারতভুক্তি সব সময় প্রশ্নাতীত ছিল এবং থাকবে। আমরা এই বিশ্বাসে অবিচল।
কপিল সিব্বাল ছাড়া বুধবার আর কোনো আইনজীবী সুযোগ পাননি। জম্মু-কাশ্মীরের ভারতভুক্তি, তার বিশেষ মর্যাদা, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ, কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলির বিবেচনা, অবস্থান ও নির্দেশ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় সংসদ এক প্রস্তাব এনে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এটা করা যায় না।
সাংবিধানিক উদ্ধৃতি ও ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্ত আদৌ সাংবিধানিক পদক্ষেপ ছিল না। সেটা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হলে ভবিষ্যতে তার বহু রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সংসদ নিজেকে জম্মু-কাশ্মীরের আইনসভা বলে ঘোষণা করেছে। সেই অধিকার ও ক্ষমতা সংসদ কোথা থেকে পেল, সেই প্রশ্নও তিনি রাখেন।
শুধু সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ নয়, কেন্দ্রীয় সরকার একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নিয়েছে। রাজ্যটি দ্বিখণ্ডিত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করেছে। কপিল সিব্বাল এ সিদ্ধান্তও অসাংবিধানিক বলে জোরালো সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাসে এই জিনিস কখনো হয়নি। কখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা যায়। রাজ্যকে বড়-ছোট করা যায়। একটি রাজ্য ভেঙে দুটি করা যায়। কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যায় না।
এ সময় বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, কিন্তু একটি রাজ্য থেকে অন্য এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে। তার উত্তরে কপিল সিব্বাল বলেন, সেটা করা যেতেই পারে। মধ্যপ্রদেশ থেকে কিছু অংশ কেটে পৃথক এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা যায়। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত বলে ঘোষণা করা যায় না।
জম্মু-কাশ্মীর ছিল পূর্ণাঙ্গ রাজ্য। সেটাকে দুই টুকরা করে তৈরি করা হয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা রাখা হয়েছে। লাদাখে নেই। কপিল সিব্বাল বলেন এটাও অসাংবিধানিক।