চালের দাম কমাতে সরকারের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। স্বল্পমূল্যে ওএমএস চালু এবং আমদানি শুল্ক কমানোর পরও মিলারদের কারসাজিতে ফের চালের দাম বাড়ছে। ভারত আতপ চাল রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করায়, মিলাররা এটাকে অজুহাত হিসাবে নিয়েছেন। তারা একদিনে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ছে। শিগগিরই খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে আমদানিকারকরা জানান, ভারত শুধু আতপ চাল রপ্তানিতে শুল্কারোপ করেছে। নন-বাসমতি চাল (সিদ্ধ চাল) রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কারোপ করেনি। এর ফলে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়ার কথা নয়।
এদিকে দুই মাস আগে মিলারদের কারণেই অস্থির হয়ে ওঠে চালের বাজার। তখন বাজার স্বাভাবিক রাখতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি শুরু হলে দেখা যায় ডলারের কারণে ভারতের থেকে আমদানি করা চালের দাম বেশি হয়। ওই সুযোগে আগস্টে মিলাররা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রতি কেজি মোটা চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। সরু চালের দাম দাঁড়ায় ৮৫-৯০ টাকা। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদারের সঙ্গে দুদফায় আমদানি শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে ওএমএস শুরু হয়। এতে চালের দাম কমতে থাকে। তবে ভারত শুধু আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে মিলাররা আবারও কারসাজি শুরু করেছেন। বস্তায় ১০০ টাকা বাড়িয়ে আবারও চাল বিক্রি শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করতে সুযোগ খোঁজেন। অজুহাত পেলেই তারা সেটা কাজে লাগিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন। এবারও সেটাই হচ্ছে। তাই কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে।
শনিবার নওগাঁ ও দিনাজপুরের মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে শুক্রবার প্রতি বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও শনিবার ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। যা একদিন আগে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর ২৮ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ টাকা। যা একদিন আগে ২৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে প্রতি বস্তা স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ২৫০০ টাকা। যা একদিন আগে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রাজধানীর কাওরান বাজারের আল মদিনা রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়েনি। ভারত আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করলে মিলাররা শুক্রবার থেকে কারসাজি শুরু করেন। তারা সব ধরনের চালের দাম প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেন। শনিবার তাদের কাছে চাল কেনার জন্য ফোন দিলে তারা বাড়তি দরের কথা জানান। আমাদের সেই বাড়তি দরে চাল কিনতে হয়েছে। বিক্রিও করতে হয়েছে বাড়তি দরে। ফলে পাইকারি বাজারে চালের দাম ফের বেড়েছে।
তিনি জানান, পাইকারি বাজারে এ দিন প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩৫০০ টাকা। যা একদিন আগে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ২৭০০ টাকা। যা একদিন আগে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্বর্ণার বস্তা ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২৫৫০ টাকা। এছাড়া নাজিরশাইল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকা। যা একদিন আগেও ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দীদার হোসেন
বলেন, সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগের ফলে চালের দাম দুই সপ্তাহ ধরে কমতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ৫৮-৬০ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি করেছি। এখন ৫৪ টাকায় বিক্রি করছি। এমন করে সব ধরনের চাল ৪-৫ টাকা কমেছে। কিন্তু শনিবার পাইকারি বাজারে চাল কেনার জন্য খোঁজ নিলে দাম বাড়তির কথা জানায়। এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুচরা বাজারে পড়বে।
ভারতের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পান্না বণিক বলেন, ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কারোপের বিষয়টি এক পত্রের মাধ্যমে আমাদের জানানো হয়। যা শুক্রবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। সেই পত্রে ব্রাউন চালে ২০ শতাংশ ও হাস্ক নামের একটি চালে ২০ শতাংশ শুল্কারোপের কথা বলা হয়েছে। তবে নন-বাসমতি চালে (সিদ্ধ চাল) কোনো শুল্ক আরোপ করা হয়নি। এ কারণে আগের মতো বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত পণ্য হিসাবে নন-বাসমতি চাল বাংলাদেশে রপ্তানি অব্যাহত থাকবে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আতপ ও নন-বাসমতি চাল আমদানি হয়। কিন্তু শুধু আতপ চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ভারত। সিদ্ধ চাল আমদানিতে এখন পর্যন্ত কোনো শুল্কারোপ করেনি। তবে সিদ্ধ চালের শুল্কারোপ বিষয়ে সোমবার সঠিক তথ্য জানা যাবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের টেন্ডারকৃত আতপ চাল শুল্কমুক্ত হিসাবেই তারা রপ্তানি করবেন। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আমরা নিয়মিত চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। এতে দাম কমতে শুরু করেছে। তবে কেউ যদি আবারও বাজার অস্থিতিশীল করতে চায় আমরা তাদের ছাড় দেব না। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারের চাল ক্রয় ও বিক্রি রশিদ সংগ্রহ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।