ঢাকা, ১৫ কার্তিক (৩১ অক্টোবর) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ১ নভেম্বর ‘জাতীয় যুবদিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত
বাণী প্রদান করেছেন :

“আমি ‘জাতীয়যুবদিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের যুবসমাজকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও
অভিনন্দন জানাই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান -এর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার্ঘ্য স্বরূপ এ বছরের
প্রতিপাদ্য ‘দক্ষ যুব সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুবসমাজের আইকন। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন
যুবরাই জাতির প্রাণশক্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক। শুধু তাই নয় তারা সাহসী, বেগবান,
প্রতিশ্রুতিশীল, সম্ভাবনাময় এবং সৃজনশীল। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার যুবসমাজের
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি
ক্ষেত্রেই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ যুবসমাজ
সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন আলোকিত যুবসমাজই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে
ত্বরান্বিত করবে। জাতির পিতা যুবসমাজকে শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ক্রীড়ানুরাগীদের জন্য
৬ই আগস্ট ১৯৭৫ ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
আমাদের দুর্ভাগ্য ‘৭৫ -এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর
কতিপয় উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা ক্যু করে অবৈধভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়।
তারা যুবসমাজকে বিপথে পরিচালিত করে এবং বিভ্রান্ত করে। শিক্ষা উপকরণের বদলে তাদের হাতে তুলে
দেয় অস্ত্র, মাদক এবং কালো টাকা। যার ফলে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো পরিণত হয় সন্ত্রাসের
স্বর্গরাজ্যে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত যুবসমাজ তাদের
সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটায়, দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার
রক্ষাসহ বিভিন্ন জাতীয় সংকট উত্তরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে যুবসমাজকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী নানা
কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে বর্তমান
সময় পর্যন্ত যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি,
বৃত্তিমূলক এবং কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যুবঋণ দিয়ে তাদের
আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। গত তের বছরে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রবাসেও যুবদের
কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটছে। ৬৪টি জেলা কার্যালয় ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৫০০টি উপজেলায়
৮৩টি ট্রেডে এ পর্যন্ত ৬৪ লক্ষ ৬১ হাজার ২৩৮ জন যুবকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। ৯ লক্ষ ৯১ হাজার
৬৯১ জন যুবদের মধ্যে ২ হাজার ১শত ১১ কোটি ৪২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। প্রশিক্ষিত
যুবদের মধ্যে ২২ লক্ষ ৮০ হাজার ১৫৩ জন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমাদের
সরকারের গৃহীত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২ লাখ ২৯ হাজার ৭শত ৩৭ জন শিক্ষিত
বেকার যুবক ও যুবনারী কর্মসংস্থান লাভ করেছে।

আমরা ‘যুবকল্যাণ তহবিল আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করেছি, যার আওতায় এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৯ শত
৬৯টি যুব সংগঠনকে ২০ কোটি ৮৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছে। ‘জাতীয় যুবনীতি ২০১৭’

প্রণয়ন এবং তদানুযায়ীকর্ম পরিকল্পনা প্রকাশ করেছি, সেই সঙ্গে ইয়ুথ ইনডেক্স প্রণয়ন করেছি।
স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনগুলোকে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে
যুব সংগঠন (নিবন্ধন এবং পরিচালনা) আইন, ২০১৫ ও যুব সংগঠন (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিধিমালা,
২০১৭ প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় ৫ হাজার ২৩টি যুব সংগঠনকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। যুব
সংগঠকগণ সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিকালীন
স্বেচ্ছাসেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যুবসমাজের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করতে জাতীয় যুব
কাউন্সিল (গঠন, কাঠামো, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করেছি।

বিশ্বব্যাপী ‘কোভিড-১৯’ মহামারির সময়েও আমাদের যুবসমাজের কর্মস্পৃহা আমাদের অর্থনৈতিক
অগ্রযাত্রাকে সচল রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে আমাদের যুবসমাজ
আমাদের সরকারের গৃহীত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে জাতির
পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা
রাখবে।

আমি ‘জাতীয় যুবদিবস ২০২১’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয়
বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী
হোক।”