ঢাকা, ১৬ কার্তিক (১ নভেম্বর) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২ নভেম্বর ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও
মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস
২০২১’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরাপদ
রক্তের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭২ সালে তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, বর্তমান বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের
অন্ধত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই ‘The Blind Relief (Donation of
Eye) Act, 1975’ প্রণয়ন করেন।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই আমরা ব্লাডব্যাংক ও চক্ষুব্যাংক স্থাপনের
জন্য সন্ধানীকে নীলক্ষেতে একটি প্লট বরাদ্দ দেই। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে
মানবদেহে সংযোজনের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও তার আইনানুগ ব্যবহার
নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ প্রণয়ন করি।
সেই আইনে আমরা মানবদেহের কিডনি, হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়,
অস্থি, অস্থিমজ্জা, চক্ষু, চর্ম ও টিস্যুসহ যে কোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ সংযোজন এবং
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনানুগ কোন উত্তরাধিকারের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গ
নেয়ার বিধান রেখেছিলাম। যার ফলে স্বেচ্ছায় অঙ্গদানসহ মরণোত্তর চক্ষুদানে সকল
আইনি জটিলতার সমাধান হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১নং আইনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী
আইনটিকে যুগোপযোগী করে ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৮’
প্রণয়ন করেছি। শুধু তাই নয়, সংশোধিত আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, বিচার,
আপিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে Code of Criminal Procedure এর প্রয়োগের বিধান
রেখেছি।

সন্ধানী মানবতার পথ ধরে হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগীর জীবন ফিরিয়ে দিতে ১৯৭৮
সালের ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন
করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি রক্তদানকে একটি
সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছে। ১৯৮৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ
হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করেছে এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে প্রায় চার হাজার জনকে
দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।

আমরা চাইলেই আমাদের স্বজনদের মৃত্যুর পর শোককে এক মহৎ সেবায় পরিণত
করতে পারি। যে কোনো উত্তরাধিকার তার স্বজনের মৃত্যুর পর চোখ সংগ্রহের অনুমতি দিতে
এগিয়ে আসলে দেশে কর্নিয়া দান ও কর্নিয়া সংযোজনে এক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। আশা
করি সন্ধানী মরণোত্তর চক্ষুদানকেও জনপ্রিয় করে তুলে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার
আসনে প্রতিষ্ঠা করবে।

আমি সন্ধানী, সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং
সর্বস্তরের জনগণকে এই মানবিক কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য
আহ্বান জানাই। করোনা মহামারির সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অনুষ্ঠান পালনের
জন্য অনুরোধ করছি।

আমি ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস ২০২১’ উপলক্ষ্যে
গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী
হোক।”