১৮ জুন, ২০২৩
জিলহজ শব্দটির আরবি অর্থ হলো জুলহিজাহ। হিজরি (চন্দ্র) বর্ষের শেষ মাস জুলহিজাহ বা জিলহজ। পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত চারটি সম্মানিত মাসের (মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ) একটি হওয়ায় পুরো জিলহজ মাসই অনেক মর্যাদাপূর্র্ণ। তবে প্রথম দশকের রয়েছে আরও বিশেষ মর্যাদা। কারণ এ সময়েই ইসলামের সব মৌলিক ইবাদতের সমাবেশ ঘটে। নামাজ সারা বছরই ফরজ, বছরজুড়েই বিভিন্ন নফল রোজার বিধান রয়েছে, নিসাব পরিমাণ মালের বর্ষপূর্তি হলেই জাকাত প্রদান করার বিধান রয়েছে। এভাবে নামাজ, রোজা ও জাকাত বছরের সব সময়ই আদায় করা হয়। কিন্তু হজ কেবল জিলহজ মাসেই করা হয়। তাই জিলহজেই ইসলামের সব মৌলিক ইবাদতের সমাবেশ ঘটে। জিলহজের প্রথম দশকেই (নবম দিনে) সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াত নাজিল করে আল্লাহতায়ালা ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করেন। জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ গুরুত্বের আরেকটি কারণ হলো- আল্লাহতায়ালা সুরা ফাজরের ২ নম্বর আয়াতে এ ১০ রাতের কসম (শপথ) করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শপথ প্রভাতের, শপথ ১০ রাতের’ (সুরা ফাজর ১-২)। আল্লাহতায়ালা এ ১০ রাতের কসম করার ফলে এ রাতগুলোর বিশেষ মর্যাদা প্রমাণিত হয়েছে। এ দশকের মৌলিক আমল হলো সামর্র্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি করা। তা ছাড়া বিশেষ আমলগুলো হলো-
১. ঘরে-বাইরে তাকবির বলা : জিলহজের প্রথম দশকজুড়েই ঘরে-বাইরে তাকবির বলার গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আজ বিলুপ্তপ্রায়। অথচ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এ আমল গুরুত্বের সঙ্গে করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতায়ালার কাছে জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। তোমরা সেই দিবসগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) তাহলিল (লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) পাঠ কর’ (মুসনাদে আহমাদ)।
২. নফল রোজা ও নামাজ : এ দিনগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা এবং প্রথম দশকের রাতগুলোতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। এর একদিনের রোজায় এক বছরের রোজার এবং এক রাতের ইবাদতে লাইলাতুল কদরের (হাজার মাসের চেয়েও বেশি) ইবাদতের সওয়াব রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই দিনগুলোর একেকটি রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য। এই ১০ রাতের প্রতিটি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য’ (তিরমিজি)। আরাফার দিনে (৯ জিলহজ) রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখবে, তার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার দরবারে এই আশা করা যায় যে, এই রোজা তার পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে’ (ইবনে মাজাহ)।
৩. চুল-নখ না কাটা : কোরবানির নিয়তকারীদের জিলহজ মাসের শুরু থেকে কোরবানি না করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটাও সওয়াবের কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখলে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানির নিয়ত করলে সে কোরবানি না করা পর্যন্ত চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে’ (সহিহ মুসলিম)।
৪. তাকবিরে তাশরিক : ৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ) বলা প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব।