১২ আগস্ট ২৩

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়। নতুন চারতলা ভবনের আশায় ভেঙে ফেলা হয় বিদ্যালয়ের একমাত্র মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনটি। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। টেন্ডার আহ্বানের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। বাধ্য হয়ে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হলেও তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। ফলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। ঝড়-বৃষ্টির মতো দুর্যোগে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ায় দেখা দিচ্ছে অনীহা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জানা যায়, তিন বছর আগে ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে জায়গায়টি খনন করা হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি নির্মাণকাজ। বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষের একটিতে অফিস কার্যক্রম এবং একটিতে ক্লাস নেওয়া হয়। এতে বেশির ভাগ ক্লাসই চলছে মাঠে। এতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি কমছে উপস্থিতির সংখ্যাও।

নবম শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, অনেক দিন ধরেই বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিদ্যালয় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। তারা দ্রুত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের দাবি জানায়।

উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সারাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, নতুন চারতলা ভবনের আশায় মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। শিক্ষা অফিসের অবহেলার কারণে তিন বছর পার হলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

একই উপজেলার সাব্দী দারুস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসার মূল ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় পাঁচ বছর আগে। চার বছর আগে নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডার হয়। দফায় দফায় মাটি পরীক্ষা করা হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি নির্মাণকাজ। তাই বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ভবনেই চলছিল পাঠদান। মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনের পলেস্তারা পড়ে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর এখন মাঠেই ক্লাস চলছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি পুরোনো ভবনের ছাদের পলেস্তারা মাথায় পড়ে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ে মাদ্রাসা মাঠেই ক্লাস চলছে।

জানা গেছে, ২০১৮ ও ২০২১ সালে পাওয়া তিন প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর বিভাগে ৪ হাজার ৮৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শতভাগ কাজ হয়েছে ২ হাজার ১১৪টির। বাকি ২ হাজার ৭৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটির কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একেবারেই বন্ধ রয়েছে অনেক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ ও সংস্কারকাজ। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসাসহ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪১টি। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ শেষ করতে না পারলে ফেরত যাবে বরাদ্দের টাকা। এতে নির্মাণকাজ যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, তেমনি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষা কার্যক্রমেও। ঠিকাদাররা বলছেন, বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীসহ উপকরণের দাম বাড়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

রংপুর ঠিকাদার সমিতির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ পাওয়ার পর কিছু নির্মাণসামগ্রী কেনাও হয়েছিল। টেন্ডার হওয়ার সময় সব মালপত্রের দাম কম ছিল। বর্তমানে পণ্যগুলোর দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছি না। এ কারণে বাকিগুলোর কাজও চলছে ধীরগতিতে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ সংকট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধি অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশির ভাগ ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। বৃষ্টি হওয়ায় চলমান কাজগুলো আপাতত বন্ধ আছে। অল্প সময়ের মধ্যে আবারও কাজ চালু হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারের অবহেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ আছে। তবে দ্রুত কাজ শেষ হবে, করা হবে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন, মাটি সমস্যার কারণে জায়গা নির্ধারণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। ৮৭ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাকি প্রতিষ্ঠানের কাজও শেষ হবে।

নির্দিষ্ট প্রকল্পের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণ কাজে নতুন করে দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো কাজ না করায় তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।