ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগ এনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) একটি মামলায় বিচার কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। ইতোমধ্যে একমাত্র আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। প্রসিকিউশন দলও তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে রকেট গতিতে। তিন মাসের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য সবার আগে অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ শেখ হাসিনার বিচার। সেভাবেই তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দল কাজ করছে। আশা করছি, তিন মাসের মধ্যে আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারব। তদন্ত শেষ হলে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে তাঁর আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বিচার প্রক্রিয়ায় তড়িঘড়িকে সন্দেহের চোখে দেখছে আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার তোড়জোড় চলছে।

অবশ্য আইসিটি আইনে কোনো ব্যক্তির সাজা হলে তিনি আজীবন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ভোটার তালিকা থেকেও বাদ পড়বেন। সংসদ নির্বাচনের আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা রয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর সারাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়লেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সব অভিযোগের একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আরেকটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর পর তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস সময় দেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর গত সাড়ে তিন মাসে তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, গুম, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, পিলখানা ট্র্যাজেডিসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ১৬৮টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ রয়েছে ৪৪টি।