তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও নিম্নআয়ের মানুষদের। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

ঠাণ্ডার প্রকোপে অনেক শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকছে।

শহরের কালিবাড়ি এলাকার রিকশাচালক হাফিজুল ইসলাম বলেন, “সকালে ঠাণ্ডার কারণে লোকজন কম থাকে। যাত্রী না থাকলে আমাদের আয়ও কমে যায়।

সারাদিন পরিশ্রম করেও সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
একই পরিস্থিতির শিকার দিনমজুর আব্দুল করিম। তিনি বলেন, “দিনে কাজ করলে তবেই তো রাতে খেতে পারব। কিন্তু এই ঠাণ্ডায় কাজ কমে গেছে, অনেক জায়গায় কাজ বন্ধও আছে।

কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।”
শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে পড়েছেন দরিদ্র মানুষ। অনেকের গায়ে ছেঁড়া পুরনো শাল বা সোয়েটার দেখা গেছে। সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা রমিজা খাতুন বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের জন্য ভালো কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারছি না।

শীতের কাপড় বিতরণের কথা শুনছি, কিন্তু এখনো পাইনি।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে গরম কাপড় বিতরণ করেছি, আরো বরাদ্দ এলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে।”

শীতের কারণে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ জামান জুয়েল বলেন, “শীতজনিত রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, তবে সাধারণ মানুষকে শীত থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।”

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি, সরকারি সহায়তা আরো দ্রুত পৌঁছানোর দাবি উঠেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় সমাজকর্মী মো. স্বপন বলেন, “শীতের এই কষ্ট থেকে মানুষকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়ানো দরকার। ঠাকুরগাঁওয়ের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যেন একটু উষ্ণ হয়, সেজন্য দ্রুত প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ।”