২৬ জুলাই ২০২৩

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শহরে ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল। হাসপাতালের সামনে থাকা তিনটি দোকানের কোনোটিতেই ডাব নেই। তারপরও ডাব নিতে কয়েকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।

কিছুটা দূরে ডাব বিক্রি করছেন একজন। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত, যেন কথা বলার ফুরসত নেই। কেউ একাধিকবার দাম জিজ্ঞেস করায় বিক্রেতার এক কথায় উত্তর, ‘একদাম ১৪০ টাকা। কম পাইলে অন্যহানে (অন্য জায়গায়) ন্যান।’

প্রতিবেদক পরিচয়ে সামান্য কথা হয় বিক্রেতা সুমন মিয়ার সঙ্গে। তার ভাষ্য, এই ডেঙ্গু ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছর এসময় ডাবের দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে এসময় ডেঙ্গুর প্রকোপ হয়। তার জন্য চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে প্রচণ্ড গরম রয়েছে। সব মিলে ডাবের বাজার অস্থির।

শুধু হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল এলাকা নয়, একই পরিস্থিতি দেখা গেল কাকরাইল মোড়ে ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনেও। সেখানে আগের থেকে ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রাকৃতিক এ পানীয়। ঢাকায় ডাবের দাম একশ ছাড়িয়েছে আরও আগে। এখন দেড়শ ছুঁই ছুঁই। বড় আকারের ডাব ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৬০ টাকাতেও ডাব বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের চারদিকে প্রায় ১০ থেকে ১২টি ডাবের দোকান। এখানে ১২০ টাকার নিচে কোনো ডাব পাওয়া যায়নি মঙ্গলবার। তবে এখানে ডাবের দাম হাসপাতালগুলোর সামনের এলাকার তুলনায় ২০-৩০ টাকা কম দেখা গেছে।

অন্যদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার। সেখানেও ডাবের দাম বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডাব এলেও সেগুলো বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

সেখানে আড়তদাররা জানান, বরিশাল, ভোলা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোর ও ময়মনসিংহ থেকে ডাব আসছে। কিন্তু আঞ্চলিক ওই বাজারগুলোতেই দাম বেশি। গত দুই সপ্তাহে পাইকারিতে ডাবের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পাইকারি বিক্রেতা খালেক হোসেন বলেন, এখানে শ’ হিসেবে ডাব বিক্রি হয়। অর্থাৎ বড় সাইজের প্রতি একশ ডাব পাইকারি ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এত দাম আগে কখনো ছিল না।

ওই বাজারে মাঝারি সাইজের প্রতি একশ ডাব ৭ থেকে ৯ হাজার এবং ছোট সাইজের ডাব ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর এসব ডাব কেনাবেচা হচ্ছে রাজধানীতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।

ডাবের পাইকারি বিক্রেতা কালু সরকার বলেন, এখন চাহিদা তুঙ্গে। আর বছরের এসময় নানা ধরনের জ্বর ও অন্যান্য রোগের প্রকোপের কারণে দাম বাড়ে। প্রতি বছর এখন এসময়টা চড়া দাম থাকে।

তিনি বলেন, এরমধ্যে গরমও বেশি। সে কারণেও দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মৌচাক ও রামপুরা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। মাঝারি মানের ডাবের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে ছোট ডাবের সরবরাহ খুব কম। বেশির ভাগ দোকানে বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে কমদামের ছোট আকারের একটা ডাবে এক গ্লাস পানি হয় না। মাঝারি ডাবে এক গ্লাস পানি পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ একগ্লাস প্রাকৃতিক পানীয় খেতে দিতে হচ্ছে একশ টাকার ওপরে।

প্রতিদিন ডাবের পানি পান করেন এমন একজন আব্দুল খালেক। তিনি বললেন, বড় সাইজের একটি ডাব তিন চার বছর আগে ৫০ টাকা ছিল। এরমধ্যে প্রায় তিনগুণ দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, অসুখের কারণে আমার মতো যাদের প্রতিদিন ডাব খেতে হচ্ছে তারা খুব অসুবিধায় আছি। এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সব কিছু।

সাজ্জাদুর নামের এক ডেঙ্গু রোগীর স্বজন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে বলছিলেন, ডাব কিনতেেই চিকিৎসার মতো বড় ব্যয় হচ্ছে। যা সবার জন্য বহন করা সম্ভব নয়।

মজিদ মোল্লা নামের এক বিক্রেতা বলেন, আজকে প্রতি একশ ডাব কিনেছি সাড়ে ১০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ গড়ে ১০৫ টাকা এক একটি। এরমধ্যে সব আবার এক আকারের হয় না। ছোটগুলো একশ টাকার নিচে বিক্রি করতে হয়। সেজন্য বড়গুলো ১৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি ডাবের দাম ছিল ২২ টাকার মতো। সেটি ২০২০ সালে গড়ে ৭৪ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে গড় দাম ১০০ টাকার নিচে হবে না।