দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।
৮২ সাংগঠনিক জেলা ও এর অধীনের ইউনিটে এসব সমাবেশ সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ১০টি শক্তিশালী টিম। যেখানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা নেতাদের রাখা হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ৯ দফা দাবিতে হবে এ সমাবেশ।
এর আগে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দাবি সংবলিত ৩০ লাখ লিফলেট ও পোস্টার তৈরি করা হয়েছে, যা দু-একদিনের মধ্যে সারা দেশে পাঠানো হবে। ‘একদলীয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’ শিরোনামে লিফলেট ও পোস্টারে গুলিতে নিহত নূরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধান, শহিদুল ইসলাম শাওন ও আব্দুল আলমের ছবিও রাখা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও ৯ দফা দাবির মধ্যে আছে-‘খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি; চাল-ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো; গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ; শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও শিক্ষা খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ; দুর্নীতির রাহুগ্রাসে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাতের হরিলুট বন্ধ; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাংবাদিকসহ সাধারণ নাগরিকদের মামলায় হয়রানি বন্ধ; ব্যাংকিং খাতে লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার, শেয়ারবাজার লুণ্ঠনের অর্থ উদ্ধার এবং কৃষক, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত মানুষের ন্যায্য দাবি মানতে হবে।’
বুধবার থেকে এই সমাবেশ শুরু হবে। শুরুর দিন ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর এবং ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ হবে। ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং সবশেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ। ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এসব বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৮২ সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এ সময় লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে সব সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি চেয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য নানা দিকনির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে জেলা ও মহানগরে কোনো কোন্দল থাকলে তা সমাধানের ওপর জোর দেন হাইকমান্ড।
সমাবেশে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যা যা দরকার, তা করতে নেতাদের নির্দেশও দেন দলটির হাইকমান্ড। ওই সভার পর সব সাংগঠনিক জেলার নেতারা নিজ এলাকায় ইতোমধ্যে চলে গেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিমগুলোও বিভাগে প্রস্তুতি সভা করছে। জেলা শাখার নেতারা সংশ্লিষ্ট থানা, উপজেলা, পৌর ও ওয়ার্ডে কর্মী সভাও শুরু করেছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমরা কেন্দ্র থেকে ২০ লাখ লিফলেট ও ১০ লাখ পোস্টার সব সাংগঠনিক জেলায় পাঠিয়ে দেব। এছাড়াও জেলার নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারাও স্থানীয়ভাবে পোস্টার ও লিফলেট তেরি করবেন। সমাবেশের আগে জনসচেতনতার জন্য পোস্টার লাগানো হবে। বিতরণ করা হবে লিফলেট।
তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির মিডিয়া সেলেরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সব সমাবেশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিডিয়া সেলের ফেরিফাইড পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা করা হবে।
বিএনপি ঘোষিত প্রথম সমাবেশ হবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে। এ বিভাগে চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান-এ দশটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে বিএনপির। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বুধবারের সমাবেশের জন্য প্রশাসনকে স্টেডিয়াম সংলগ্ন কাজীর দেউরি চত্বর ও লালদীঘির চত্বর-এ দুটি জায়গায় কথা বলেছি।
আশা করছি যে কোনো একটি তারা দেবেন। এখন মহানগরে প্রস্তুতি সভাগুলো করছি। মহানগর ছাড়াও অন্যসব সাংগঠনিক জেলায় প্রস্তুতি সভা চলছে। আশা করছি, দেশের এই ক্রান্তিকালে, মানুষের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে চট্টগ্রামের এ সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক।
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, তৃণমূলের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তাতে আমরা অনেক আশাবাদী। বিভাগীয় সমাবেশেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। ঢাকা বিভাগের মহাসমাবেশ সফলে যা যা করা দরকার, তা করা হচ্ছে। এ বিভাগের অন্তর্গত সব জেলার নেতারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা শুরু করেছেন।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমরা ঢাকার সমাবেশটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। ঢাকার সমাবেশের চেয়েও যেন রাজশাহী বিভাগের সমাবেশ বড় করা যায়, সে লক্ষ্যেই নেতারা কাজ করছেন। দু-একদিনের মধ্যেই প্রতিটি জেলায় একটি করে টিম যাবে, সেখানে নেতাদের সঙ্গে সভা করবে। সমাবেশ সফল করার জন্য প্রতিটি থানা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত যাব। কারণ এই সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি চায় তৃণমূলের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে ধাক্কা দিতে চাই। এটা হচ্ছে সরকারের পতনের ধাক্কা। যেহেতু কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। কারণ সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা এবং সমঝোতায় যেতে চাই না। সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
যে নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পারবে। এই সরকারের দুঃশাসন থেকে পরিত্রাণের জন্যই এই আন্দোলন। তাই আমাদের পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকেই যাচ্ছে বিএনপি। এতে প্রত্যেক মানুষকে আমরা যুক্ত করতে চাই।