আন্তর্জাতীক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উড়োজাহাজটির দুই ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় জেজু এয়ারের উড়োজাহাজটিতে ১৭৫ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৭৩ জন দক্ষিণ কোরিয়ার এবং দু’জন থাই নাগরিক। উড়োজাহাজটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে মুয়ান বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রোববার সকালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। খবর দেশটির বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের। দেশটির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। এর আগে ১৯৯৭ সালে গুয়ামে কোরিয়ান এয়ারের বিমান দুর্ঘটনায় ২২৫ জন নিহত হয়েছিলেন।
মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগমুহূর্তে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের ধারণা, উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে এক দল পাখির ধাক্কার কারণেই ওই শব্দ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা উড়োজাহাজের ডান ডানায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখতে পান। স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোয় সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি ল্যান্ডিং গিয়ার ছাড়াই অবতরণের চেষ্টা করছে। চাকা ছাড়াই উড়োজাহাজটি সরাসরি অবতরণ করে এবং কিছু দূর ছেঁচড়ে গিয়ে পাশের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে থাকে।
কর্মকর্তাদেরও ধারণা, ল্যান্ডিং গিয়ার না খোলা সম্ভবত পাখির ধাক্কার কারণে। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তারা ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছেন।
কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনায় ১৭৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, দুই ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উড়োজাহাজটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং নিহতদের শনাক্ত করা কঠিন।
দুই থাই নাগরিক ছাড়া বাকি যাত্রীরা কোরিয়ান ছিলেন। তাদের মধ্যে ৮২ জন পুরুষ এবং ৯৩ জন নারী। যাদের বয়স তিন থেকে ৭৮ বছর বয়সী। দুর্ঘটনার পরপরই দুই ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছিল। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের সিউলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তবে তাদের আঘাত প্রাণঘাতী নয়।
দেশটির ভূমি মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, বিমানবন্দরের একটি নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার দুর্ঘটনার মাত্র ছয় মিনিট আগে পাখির ধাক্কার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। এর এক মিনিট পরই জেজু এয়ার উড়োজাহাজটির পাইলট ‘মেডে’ ঘোষণা করেন। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিপদ সংকেত, যা কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ থেকে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মোক কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেন। এ দুর্ঘটনায় তিনি সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন।
জেজু এয়ারের সিইও কিম ই-বে দুর্ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কারণ যাই হোক, সিইও হিসেবে আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।