বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের দখলদার ইসলায়েলি হামলার প্রতিবাদ করছে। দেশে দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন। প্রতিবাদ, নিন্দায় মুখর তারা। এবার এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও ধর্মবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস।। পাশিপাশি বিভিন্ন বিক্ষোভ অব্যবহত রয়েছেন। গাজায় কয়েক সপ্তাহ ধরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। এই নারকীয় হত্যায় বিশেষভাগ নিরীহ শিশু।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও ধর্মবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস।

তিনি বলেছেন, দখলদার রাষ্ট্রটির এই হামলাকে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবিক আচরণ ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভয়াবহ লঙ্ঘনের শামিল।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি এই হামলার নিন্দা জানান। বিবৃতিতে শায়খ সুদাইস বলেন, ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে সাধারণ মানুষকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো আসমানি ধর্মগুলো অনুমোদন দেয় না। কারণ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব আসমানি ধর্ম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

এ ধরনের কার্যক্রম শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক মানবিক আচরণের পরিপন্থি। ইসরায়েলের এ ধরনের নৃশংস হামলা মুসলিম জাতির অনুভূতিকে স্পষ্টভাবে উসকানি দিচ্ছে। ইসলাম ধর্ম আমাদের মানবিক মূল্যবোধ অনুসরণের নির্দেশ দেয় যেখানে অন্যায়ভাবে প্রাণহানি, নিরাপত্তাপ্রত্যাশীদের ভয় দেখানো এবং নারী ও শিশুদের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, মূলত পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে ফিলিস্তিন জাতি ও এর নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা করা হচ্ছে।

‘পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২০নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না।’ তা ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সব প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যানের শামিল। এম আচরণ কাজের হিসাব ও পরিণতি সম্পর্কে বেপরোয়া করে তুলে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারীদের কাজকর্ম সম্পর্কে উদাসীন নন।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিপদমুক্ত হওয়ার দোয়া করে বলা হয়, ‘আমরা জাতির বিপদমুক্তি এবং আমাদের নিহত ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর অনুগ্রহের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।’ এ ছাড়া মৃতদের শহীদের মর্যাদা, আহতদের সুস্থতা এবং শত্রুদের পরাজয়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

শায়খ আবদুর রহমান আল-সুদাইস ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের দৃঢ় সমর্থনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুর ন্যায্য নিষ্পত্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং সেখানকার অধিবাসীদের ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৌদি আরব জোরালোভাবে কাজ করছে। বিশেষত অবরুদ্ধ গাজার চলমান পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশটির নানামুখী কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। টানা ১২তম দিনে গড়িয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। এতে ভারী হচ্ছে নিহতের পাল্লা। এ পর্যন্ত হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৭০০ মানুষের বেশি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ হাজার ৪৯৩ জন ফিলিস্তিনি।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ১০০০ নারী ও ১২০ জন বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে প্রতি ১৫ মিনিটে একজন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের তিন ভাগের এক ভাগ শিশু।