লেখকঃ মোঃ হায়দার আলী।। একটা সময় এ দেশের মানুষকে বলা হতো মাছে-ভাতে বাঙালি। সে সময় গ্রামাঞ্চলোর জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাড়িতে যদি ভাত নাও থাকত, তবুও মাছের কমতি ছিল না। অনেকের এমনও দিন গেছে যে, ভাত না খেয়ে শুধু মাছ খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। মৎস্য আহরণ ছিল সহজ ব্যাপার। সেই সময় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। আজ আমরা এসব মাছ খুব বেশি দেখতে পাই না। যদিও কালেভদ্রে দেখা যায়, সেগুলোর অধিকাংশই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ফলে দেশি মাছের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না।
নদী মাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিল-নালা, পুকুর ডোবা, হাওর-বাঁওড়, ধানক্ষেত, পানিবদ্ধ বিলগুলো হচ্ছে- দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রধানতম উৎস। এসব উৎস ধ্বংস, অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং নানাভাবে পরিবেশ দূষণের ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ট্যাংরা, টাকি, চান্দা, মহাশোল, সরপুঁটি, টাটকিনি, বাগাড়, রিটা, পাঙাশ আর চিতল এসব মিঠা পানির মাছের প্রজাতিগুলো চরম হুমকিতে রয়েছে। গত কয়েক দশকে বেশ কয়েক প্রজাতির পরিচিত দেশীয় মাছ এখন আর বাজারে দেখা যায় না। বর্তমানে দেশের ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে বিলুপ্ত প্রায় মিঠা পানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৬৪টি।
গত কয়েক দশক ধরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয়গুলোর আয়তনে সংকোচন, নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবার পানির অপরিমিত ব্যবহার, ডোবা-নালা ভরাট করা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশকে পানির দূষণ এবং অপরিকল্পিতভাবে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের সংখ্যা অনেক কমছে। গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বর্তমান প্রজন্ম আজ অনেক দেশি জাতের মাছের কথা ভুলে গেছে। তাদের সঙ্গে যখন দেশি মাছের কথা আলোচনা করা হয়, তখন তারা এমন ভাব করে যেন নামগুলো এই প্রথম শুনছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে এই মাছগুলো বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে? আসলে এই মাছগুলো এমনি এমনি বিলুপ্ত হচ্ছে না, বরং বিলুপ্ত করা হচ্ছে। আজ আমরা অধিক ফলনের আশায় জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করছি। এসব কীটনাশক বৃষ্টির পানির মাধ্যমে খাল ও বিলে গিয়ে পৌঁছায়। এর ফলে ওইসব খাল-বিলের মাছ মরে যায়। অন্যদিকে অনেক মাছ ডিম ফুটে বাচ্চা বের করার সময় আহরণ করা হচ্ছে। এর ফলে ওই মাছগুলো ডিমসহ ধরা পড়ছে। এভাবে মাছ ধরার কারণে অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে অতি মাত্রায় পোনা মাছ আহরণ করা হয়, যার ফলে ওই মাছগুলো নিশ্চিত বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই মানুষকে এভাবে মাছ আহরণ থেকে বিরত রাখা সময়ের দাবি।
দেশি মাছ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত। ইতোমধ্যে কিছু দেশি প্রজাতির মাছ গবেষণার মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা গেছে। অন্য যেসব মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, সেসবও রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে। মাছ আমাদের অন্যতম সম্পদ। পৃথিবীতে মাছ উৎপাদনে আমরা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছি। এ ধারা ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে বেশি। গবেষকরা এ ব্যাপারে অবদান রাখতে পারেন। সরকারকেও এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে ১০০ প্রকারের বেশি দেশীয় মাছ থাকলেও এখনো কোন মাছকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি আইইউসিএনের এ সংক্রান্ত নিয়মটি হচ্ছে, সর্বশেষ কোন একটি প্রজাতির মাছের দেখা পাবার পর পরবর্তী ২৫ বছরে যদি সেই প্রজাতির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন বলছিলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে নান্দিল নামে এক সময় একটি মাছ দেখা যেত, কিন্তু গত ২০ বছরে সেটির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ দেখা যায়নি। আবার সিলেট অঞ্চলের পিপলা শোল নামে একটি মাছ দেখা যেত, যা এখন আর দেখা যায় না। গত ১০ বছরে দেখা যায়নি এই মাছ। “দেখা যায়নি, কিন্তু তবু বিলুপ্ত ঘোষণা করার আগে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। “যদি এর মধ্যে বিপন্ন মাছেদের অস্তিত্বের ব্যপারে কোন তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে হয়ত আইইউসিএনের পরবর্তী জরিপে এগুলোর ব্যপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকতে পারে।”
আইইউসিএনের ২০১৫ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণীতে মোট ৬৪ প্রজাতির মাছকে রেড লিস্ট বা লাল তালিকাভুক্ত করেছে, এর মানে হচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ হয় প্রায় বিলুপ্ত, মহাবিপন্ন ও বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘আপডেটিং স্পেসিস রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের অধীনে এই তালিকা করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রথম জরিপটি হয়েছিল ২০০০ সালে, সে সময় ৫৪টি প্রজাতিকে রেড লিস্টভুক্ত করা হয়েছিল। জরিপে মূলত স্বাদু পানির এবং আধা লোনা পানির মাছকেই গণনায় ধরা হয়েছিল।
বাংলাদেশে বিপন্ন মাছের মধ্যে রয়েছে—পাঙ্গাস, দারি, ককসা, টিলা বা হিরালু, টিলা ককসা, রানি বা বউ মাছ, বেতাঙ্গি, বেটি বা পুতুল মাছ, কালা বাটা, ঘর পোয়া, ঘর পইয়া, ঘোড়া মাছ, এলানগা, কচুয়া পুটি, বোল, চিতল, গজার, টেংরা, রিটা, গাঙ্গিনা বা চাকা মাছ, বট শিং, ঘাউড়া, সাল বাইম। এছাড়া সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে বাও বাইম, চাপিলা, গুতুম, পুঁইয়া, পিয়াসি, জারুয়া বা উট্টি, ছেপ চেলা, গোফি চেলা, বাটা মাছ, নারু মাছ বা গনিয়া, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা, বেলে, শিং, আইড়, বোয়াল, তেলি, কুইচ্চা মাছ, বামোস মাছ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা বলছেন, মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে তিনি প্রথমেই জলাশয় কমে যাওয়াকে দায়ী করেন। “শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও। “কেবল দেশী জাত ও স্বাদের মাছই নয়, এর সঙ্গে কচ্ছপসহ নানা ধরণের জলজ প্রাণী ও সরীসৃপের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।” সেই সঙ্গে রয়েছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি, যা বৃষ্টিতে ধুয়ে খাল বিলসহ জলাশয়গুলোতে পড়ে। এর ফলে মাছের মৃত্যু ও প্রজনন হার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আছে কলকারখানার বর্জ্য নিকটস্থ জলাশয়ে ফেলা হয়, তার ফলেও মাছ মরে যায়, বলেন মিজ ফাতেমা। এর সঙ্গে অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন-সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, বাংলাদেশ মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশী মাছের চাষের কারণেও দেশী প্রজাতির মাছ কমে গেছে।
দেশের বাজারে এক সময় দেশীয় চাষের মাছের আধিক্য দেখা যেতো। “ধরুন এখানে তেলাপিয়া, কার্পজাতীয় মাছ আনা হয়েছে, আবার এক সময় আফ্রিকান মাগুর আনা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে আনা হলো পিরানহা–এগুলো দেশী মাছের খাবার ও বাসস্থল দখল করতো। অনেক সময় দেশী মাছ খেয়ে ফেলতো কোন কোন বিদেশী প্রজাতি।” যদিও পরে আফ্রিকান মাগুরের চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তারপরেও বিদেশী মাছের প্রজাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেক মাছ কমে গেছে। বাংলাদেশে দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছের হার কমে যাবার প্রেক্ষাপটে গত দুই দশকে কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে মাছের সরবারহ বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর সাড়ে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।
মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক মানুষ এর মধ্যে নদী, বিল ও হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ২৫ শতাংশ, পুকুর, ডোবার মত বদ্ধ জলাশয় থেকে ৫৭ শতাংশ এবং বাকি অংশ সমুদ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে ৮ লাখ হেক্টর বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ হয়। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের কর্মকর্তা বলরাম মহালদার জানিয়েছেন, কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে বাজারে চাহিদা আছে এমন মাছই বেড়েছে। “কিন্তু বাজারে চাহিদা কম এমন মাছ তো চাষ করছে না কেউ, ফলে সেগুলোর অস্তিত্ব সংকট আগের মতই থাকছে। যেমন খলিশা, চাপিলা, মেনি, ফলি, বাও বাইম, গুতুম, কুইচ্চা মাছ, বামোস ইত্যাদি ধরণের মাছ দেখতে পাবেন না।”
“এখন বাজারে পাবদা বা গুলশা মাছ বা পাঙ্গাস পাবেন আপনি, সেগুলোর চাহিদা আছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হলে, বিপন্ন মাছের ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।” তবে ফসলি জমি নষ্ট করে দেশে মাছ চাষ করা নিয়ে পরিবেশবাদীদের এক ধরণের বিরোধিতাও রয়েছে।
তাদের পরামর্শ বিদ্যমান নদী ও পুকুরগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যদিও এখন কৈ, শিং, পাবদা, মাগুর, সর পুটি, চিতলসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ সহজলভ্য হয়েছে, কিন্তু সেই সব মাছের স্বাদ আগের মত নয়।
বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কয়েক প্রজাতির পরিচিত দেশীয় মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নেই’ হয়ে গেছে। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন বলছে, এর মধ্যে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ হবার পথে বাঘাইর, পিপলা শোল বা বাক্কা মাছ, মহাশোল, নান্দিলা মাছ, চান্দা, ভাঙ্গান বাটা, খরকি মাছ, কালো পাবদা, চেনুয়া মাছসহ বেশ কিছু মাছ রয়েছে।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশের একমাত্র মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফা আলী রেজা হোসেন জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে দেশের ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। “আইইউসিএন বাংলাদেশের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা করার জন্য দুটি জরিপ চালিয়েছিল, ২০০০ সালে প্রথম জরিপে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে সর্বশেষ জরিপে তাতে আরো ৬৪ প্রজাতির মাছ যুক্ত হয়।”
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর মাছের প্রচন্ড আকাল দেখা দেবে।
সাধারণত জৈষ্ঠ মাসের মধ্য থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্য পর্যন্ত সকল প্রকার দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। জৈষ্ঠ মাসের মধ্যকালে প্রথম বৃষ্টির পর থেকেই এসকল সাদুপানির মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে। যা চলে শ্রাবণ মাসের মধ্য পর্যন্ত। বৃষ্টির পরপরই যখন বিভিন্ন জলাশয়গুলো পানিতে ভরে যায়, তখন নদ-নদী, খাল-বিল-নালা, হাওড়-বাওড়, ধান ক্ষেতসহ জলাবদ্ধ বিলগুলো জলাজমির সাথে মিশে যায় এবং তখন মুক্ত জলায়শয়ে থেকে ছড়িয়ে যায় মাগুর, শিং, কৈ, টাকী, শৈল, গজাল, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, সরপুঁটি, খলিসা, মলা, বাইন, বোয়াল, গলদা চিংড়ি মাছ। আর তখনই স্থানীয় জনগণ অনুমোদিত ঝাকি জাল, চর পাটা জাল, বেবদি জাল, কারেন্ট জাল, চাইঁ, বরশি, টোটা, কোচ, বর্সাসহ বিভিন্ন রকম হাতে বানানো ফাঁদ পেতে মাগুর, শিং, কৈ, টাকী, শৈল, গজাল, পাবদা, টৈংরা, পুঁটি, সরপুঁটি, খলিসা, মলা, বাইন, বোয়াল, গলদা চিংড়ি এসকল প্রজাতির মাছ নিধন করতে থাকে। যার মধ্যে অধিকাংশ থাকে ডিম ছাড়ার পর্যায়ের ‘মা মাছ’। এসব মা মাছ দেদারসে মারার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ব্যহত হচ্ছে এবং দিন দিন কমে যাচ্ছে।
তবে এর বিপরীত চিত্র রয়েছে মৎস্য চাষে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, পুকুর ডোবা বা বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য চাষে গত এক দশকে বিপ্লব ঘটেছে। গত এক দশকে কৃষিপণ্য হিসেবে মাছের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রায় বিলুপ্তির মুখ থেকে ফিরে এসেছে এমন দেশি মাছের সংখ্যাও এখন বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা হক বলেন, দেশীয় মাছের অনেক প্রজাতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এর জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে দেশীয় মাছের উৎস নদী-নালাসহ বিভিন্ন জলাশয় কমে যাওয়া। শহর- গ্রাম সবখানেই নদী-খালসহ সব ধরনের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও। কেবল দেশী জাত ও স্বাদের মাছই নয়, এর সঙ্গে কচ্ছপসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে।
দ্বিতীয়ত কারণ হচ্ছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি, যা বৃষ্টিতে ধুয়ে খাল-বিলসহ জলাশয়গুলোতে পড়ে। এর ফলে মাছের মৃত্যু ও প্রজনন হার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া কলকারখানার বর্জ্য নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে এর ফলেও মাছ মরে যায়। এর সঙ্গে রয়েছে অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন-সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা।