দুবাই, ২৮ অগ্রহায়ণ (১৩ ডিসেম্বর) :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর নারী
ক্ষমতায়ন’ উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটেগরিতে
‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক ২০২১’ এ ভূষিত হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর
রহমান এই পদকটি গ্রহণ করেন। পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব
মোঃ মোহসীন উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের জনসেবা পদক গ্ৰহণের প্রাক্কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
সশ্রদ্ধচিত্তে গভীরভাবে স্মরণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
জন্মশতবার্ষিকীতে মহান বিজয়ের এই মাসে জনসেবায় শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক
স্বীকৃতি তথা জাতিসংঘের এই পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার সরকারের
অন্যতম সেরা অর্জন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড়
প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপটে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানটি বহুমাত্রিক দুর্যোগ মোকাবিলায়
সক্ষম হয়ে ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। একটি নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে
সমাজভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এক সময় নারীরা যেকোন দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হতো।
কিন্তু এ চিত্র পাল্টে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ফলে নারীরা এখন
লিঙ্গ বৈষম্যহীন দুর্যোগ সহনীয় সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম শক্তি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তারা
দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সেবাদানকারী হিসেবে গৃহে, কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে
প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।
সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক কাঠামোয় নারী স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা পুরুষের এক-তৃতীয়াংশ ছিল। সক্ষমতা,
অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বেও তারা পিছিয়ে ছিল। এ অসমতা দূর করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২০২০ সালে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন’ দিবসে সিপিপিতে ১৮ হাজার ৫০৫ জন ‘নতুন নারী
স্বেচ্ছাসেবক অন্তর্ভুক্তি’ উদ্বোধন করেন। এরপরে ধারাবাহিকভাবে নারী স্বেচ্ছাসেবকগণের গুনগত
মানোনন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগ সাড়াদানে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবায় নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ‘সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক নির্দেশিকা ২০২১’ এ বিশেষ বিধান সৃষ্টি
করা হয়েছে।
বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় সিপিপির ৭৬ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে, যার
অর্ধেক নারী। সিপিপির প্রশিক্ষিত ও উপকরণে সজ্জিত নারী স্বেচ্ছাসেবকগণ বর্তমানে দুর্যোগ
মোকাবিলায় প্রস্তুত হয়েছে। নারী স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে উপকূলীয় এলাকায়
বিশেষত নারীদের মধ্যে দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতি, নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়
করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা লক্ষ্যণীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেই নারীদের দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবা
হতো, তারাই আজ দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্ধেক শক্তি। ‘গৃহিনী’ থেকে ‘সাড়াদানকর্মী’ হিসেবে রূপান্তরের
প্রক্রিয়ায় সিপিপি নারী স্বেচ্ছাসেবকগণ ‘পরিবর্তনের দূত’ হিসেবে কাজ করছে, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ
জেন্ডার-রেসপন্সিভ টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগেরই স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক ২০২১’ প্রদান করেছে।
উদ্যোগটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে নারীর ক্ষমতায়নের
এক অভিনব উদাহরণ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এ পুরস্কার প্রাপ্তি প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের আরেকটি মাইলফলক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে বিজয়ের
মাসে এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্ব সমাজে
এক নতুন মর্যাদায় আসীন হলো।
জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড হল জনসেবায় শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এটি জনসেবা প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীল সাফল্য এবং অবদানের স্বীকৃতি দেয়, যা
বিশ্বব্যাপী দেশগুলোকে আরও কার্যকর এবং সেবামূলক জনপ্রশাসনের দিকে পরিচালিত করে।
জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড জনসেবার ভূমিকা, পেশাদারিত্ব এবং দৃশ্যমানতা প্রচার করে।