ঢাকা, ২৭ মাঘ (১০ ফেব্রুয়ারি) :
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঢাকার ওপর
অতিরিক্ত চাপ কমাতে স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে যে মানের
চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়, সেই একই মানের চিকিৎসা সেবা যাতে দেশের ৮ বিভাগেই পাওয়া যায়
সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৮ বিভাগে
ক্যান্সার, কিডনি, লিভারের মত অতি দুরারোগ্য রোগগুলোর চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে উন্নত ও
আধুনিকমানের ৮টি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এগুলোতে প্রায় ১৪০০ শয্যা বৃদ্ধি হবে
কেবল ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যই। দেশের আনাচে-কানাচে প্রায় ১৮ হাজারের মত কমিউনিটি
ক্লিনিক নির্মাণ করে সেখানে ৩২ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের
মানুষজন উপকৃত হচ্ছে। এভাবে দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের জন্য উন্নতমানের
যন্ত্রপাতি কিনে, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে, দেশের মফস্বল হাসপাতালে ভালো
চিকিৎসক পদায়ন করে সর্বত্র ঢাকার মত সমপর্যায়ের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ
হাতে নেয়া হয়েছে।
আজ সকালে রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ‘বিশ্ব
ক্যান্সার দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব
কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ক্যান্সার রোগের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে বছরে
৬৭ ভাগ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়। দেশে এখন প্রায় ২০ লাখ ক্যান্সার রোগী আছে।
প্রতিবছর দেশে ১ থেকে দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। সে তুলনায় দৈনিক ক্যান্সারে ২০০
থেকে ৪০০ মানুষ মারা যাচ্ছে যা খুবই উদ্বেগজনক। সময় মতো ক্যান্সার রোগটি ধরা গেলে নিরাময়
করা যায়। কিন্তু দেরি করে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন,
ক্যান্সার হবার আগেই ক্যান্সার যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বায়ু দুষণ, শব্দ
দুষণ, খাদ্যে নানা রং মেশানো বা ক্ষতিকারক ওষুধ মেশানোর মাধ্যমে দিন দিন ক্যান্সার অনেক
বেড়ে যাচ্ছে। চাষে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও তামাকের কারণেও ক্যান্সার বেড়ে যাচ্ছে।
এগুলো নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। মানুষকেও জীবনের গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং সচেতনতা অবলম্বন
করতে হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশের একমাত্র জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের কথা উল্লেখ করে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্যান্সার চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবন করে
হাসপাতালটি মাত্র ৫০ শয্যা থেকে প্রথমে ৩০০ শয্যা ও পরে ৫০০ শয্যায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়া ৮ বিভাগে আরো ৮টি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবায় সরকার ব্যাপক কাজ করছে বলেই মহামারি করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের আগেই
দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করা
হয়েছে। এই উদ্যোগের কারণেই করোনার ৩য় ঢেউ আমাদের কাবু করতে পারেনি। করোনায় এবার
রোগী কম, মৃত্যু সংখ্যাও কম হচ্ছে। সরকারের এই সফলতা ধরে রাখতে সকলকে নিজ নিজ জায়গায়
তৎপর ও নিষ্ঠাবান থাকতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার
বন্দ্যোপধ্যায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে সকালে ‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এরপর মন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করেন এবং করোনা
পরীক্ষা সহজলভ্য করতে হাসপাতালে একটি আরটি পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করেন।