গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বর্বরতা যেন থামছেই না। নতুন করে আবারও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীরা।

ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলা ও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতিশোধমূলক আগ্রাসনের ৫০০তম দিন পূর্ণ হলো গতকাল সোমবার। প্রায় এক মাস ধরে গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে।

চলমান যুদ্ধবিরতির অধীনে এরই মধ্যে ষষ্ঠ দফায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি- ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময় ঘটেছে। চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ মার্চের শুরুর দিকে শেষ হওয়ার কথা।
লড়াইরত দুই পক্ষ এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরো বাড়াবে কি না তা এখনো অস্পষ্ট রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে গাজাবাসীর জীবন। ধ্বংস, মৃত্যু আর ক্ষুধার প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি।
ইসরায়েলি সরকার, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো থেকে এই যুদ্ধের ধ্বংস ও মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়।

জিম্মি হয় ২৫১ জন। গাজায় এখনো জিম্মি আছে ৭৩ জন, এর মধ্যে তিনজনকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
গাজায় থাকা ৩৬ জিম্মি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৫০০ দিনে গাজায় ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে ৪৮ হাজার ২০০ জনের বেশি। আহত হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৬০০ জনের বেশি।

হামলার কারণে গাজার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর উত্তর গাজায় ফিরে গেছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে ৮৪৬ জন। গাজার দুই লাখ ৪৫ হাজারের বেশি ভবন, ইউনিট ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে ৯২ শতাংশের বেশি। ৮৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে এসব সংস্কৃতি ও স্থাপনা ধ্বংস করেছে।

ফরাসি ইতিহাসবিদ জাঁ-পিয়ের ফিলিউ বলেন, গাজার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। আফ্রিকা ও এশিয়ার সঙ্গে গাজার চার হাজার বছরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তার সব চিহ্নই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। গাজায় শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মতো নয়। এ আগ্রাসনে গাজার ভিটে-মাটি ও হাজার বছরের ইতিহাস ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ধ্বংসের নমুনা তুলে ধরে জাঁ-পিয়ের ফিলিউ বলেন, গাজার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ, গির্জা ও জাদুঘর ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। চোখের সামনে থেকে মানবতার স্মৃতি মুছে ফেলছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনী, গাজার বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ওমরি মসজিদ ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি এখন ধ্বংসস্তূপ।

এছাড়া দুই হাজার বছরের পুরনো সেন্ট পরফিরাস চার্চ ধ্বংস করেছে ইসরায়েলিরা। পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি এ চার্চে শত শত খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনি নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন রোমান কবরস্থান। ধ্বংস হয়ে গেছে জাদুঘর কাসার আল বাশা।

সূত্র : আরব ‍নিউজ ও আল জাজিরা।