২৫ জুন ২০২৩

পদ্মা সেতু চালুর পর সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বেড়েছে। ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে সাতক্ষীরার সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমানের ক্ষেত্রেও। সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য এখন দিনের মধ্যেই পৌঁছে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এক বছর আগেও এটি ছিল কল্পনাতীত। এছাড়াও ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে নতুন গতি। সুন্দরবন পর্যটনেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে।

‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ-সড়কপথে সুন্দরবন’- এ স্লোগানটি আরও সহজ হয়েছে। দেশের যেকোনো স্থান থেকে পর্যটকরা সড়ক পথেই সুন্দরবন দেখতে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক অর্থনীনিতে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু তৈরির ফলে সাতক্ষীরার মানুষের কী উপকার হয়েছে এমন প্রশ্নে কুখরালী এলাকার আবু জাফর বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর তাকে আর ঢাকায় থাকতে হচ্ছে না। তিনি কাজ শেষ করে দিনে দিনে ফিরে যান নিজ বাড়িতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে। শহরের কাটিয়া এলাকার মিডিয়াকর্মী ও মৎস্য ব্যবসায়ী গোলাম সরোয়ার বলেন, মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। সকালে তোলা পণ্য দুপুরের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও পচনশীল দ্রব্যের ক্ষেত্রে মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে গেছে।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বাবু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আরিচা ফেরিঘাট পার হয়ে সাতক্ষীরার সবজি ক্ষেত থেকে তুলে ঢাকায় পৌঁছাতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগত। এখন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ভালো বাজার পাচ্ছেন। সবজি টাটকা থাকায় লাভও বেশি হচ্ছে। মাছ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা সাতক্ষীরা। মাছ পরিবহনে ফেরিঘাটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু দিয়ে সহজে মাছ বহন করতে পারায় অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই দ্রুত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজা মাছ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে গতি ফিরেছে। কলকাতা থেকে ভোমরার দূরত্ব কলকাতা থেকে বেনাপোলের দূরত্বের চেয়ে ২৯ কিলোমিটার কম। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতু ব্যবহার করে দ্রুত মালামাল তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। তাদের সময় এবং পরিবহন খরচ অনেক কমেছে। তবে ভোমরা স্থলবন্দরে কাস্টমস হাউস না থাকায় ৭২টি পণ্যের অনুমোদন থাকলেও ২২ থেকে ২৫টি এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতুর পুরো সুফল পাচ্ছেন না, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সাতক্ষীরার অর্থনীতি আমূল বদলে গেছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাইলে তারা দিনের কাজ শেষ করে দিনে ফিরে আসতে পারছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মাছ অক্সিজেনের মাধ্যমে ঢাকাসহ পাশের জেলায় যাচ্ছে। আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পেঁয়াজ, আদাসহ কাঁচামাল ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে কক্সবাজার থেকে ‘সাতক্ষীরার সাদাসোনা’ খ্যাত বাগদার রেণু আসে তা ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় মৎস্য ঘেরগুলোতে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৩ টন। পদ্মা সেতুর কারণে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এখানকার মাছ দিনের মধ্যে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া সহজ হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অঞ্চলে পর্যটক বেড়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। সড়ক পথে সুন্দরবন দেখার সবচেয়ে সহজ উপায় সাতক্ষীরা। যে কারণে মানুষ পদ্মাসেতু দিয়ে সরাসরি সুন্দরবন আসতে পারছেন। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের আশা ও উন্নয়নের প্রতীক। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদল হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব ও রপ্তানি বেড়েছে। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। তেলের দাম বাড়লেও সময় ভোগান্তি কমায় তা পুষিয়ে নিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের কাঁচামাল এখন মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া কৃষকরা তাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আম, মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীরা এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।