সবুজ বাংলাদেশ প্রতিবেদন:

প্রকল্প তৈরি প্রক্রিয়াতেই ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ৭৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধিত ডিপিপিতে ৮৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় নিয়ে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন প্রশ্ন তুলেছে। ২৩ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা জমিতে একটি এবং খাদ্য অধিদপ্তরের বিদ্যমান খাদ্যগুদাম চত্বরে ১৯৫টিসহ ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

এছাড়া অনাবাসিক ভবন, আরসিসি রাস্তা, সীমানা প্রাচীর এবং কলামসহ ১৬টি নতুন খাদ্যগুদামে কনভেয়ার বেল্ট সিস্টেম স্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন স্থাপন এবং ময়েশ্চার স্ট্যাবিলাইজার স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়-এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা ১ দশমিক ৩৮ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষক উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জনগণের কাছে খাদ্যশস্য যথাসময়ে পৌঁছনো সম্ভব হবে। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সোমবার বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ সংকটময় মুহূর্তে খাদ্যগুদাম নির্মাণ প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কিনা সেটিই বড় প্রশ্ন। কেননা এর আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সাইলো নির্মাণের একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পে ২৫-৩০ লাখ টন খাদ্য মজুতের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অল্প সময়ের মধ্যে কেন আবার এ ধরনের প্রকল্প এবং ব্যয়ের গরমিল হওয়া প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের খাদ্য ও সার মনিটরিং অনুবিভাগের উপপ্রধান শারমিনা নাসরীন জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১৪ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। মূল ডিপিপির সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা যায়-প্রকল্পে ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া পুনর্গঠিত ডিপিপিতে আরও কিছু অসঙ্গতি ও ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে দ্বিতীয় পিইসি সভা ডাকা হয়।

পিইসি সভা সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আগের ডিপিপিতে পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুসরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ২০২২ সালের রেট শিডিউল ধরে ব্যয় প্রাক্কলন করায় অনাবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেড়েছে। আবার কিছু খাতে ২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় কমেছে। যোগ-বিয়োগ করে সার্বিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেড়েছে। তিনি আরও জানান, এমএস গেট নির্মাণ খাতে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় কাজের পরিমাণ ও ডিজাইন কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। একইসঙ্গে গেট নির্মাণের মূল উপকরণ এমএসের পরিবর্তে এসএস প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এ খাতে ২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। রডের দাম ২১ শতাংশ, কংক্রিটের দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এ অবস্থায় সভায় এমএস গেট নির্মাণে আগের ডিজাইন ও উপকরণ ঠিক রেখে রেট শিডিউল ২০২২ ধরে ব্যয় প্রাক্কলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের প্রতিনিধি তাওসীফ রহমান বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে কাজের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী পরামর্শকের সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া পরামর্শকের বেতন অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে পরামর্শক সংখ্যা ও বেতন পিপিআর-২০০৮ (সরকারি ক্রয় আইন) কমিয়ে অনুযায়ী যৌক্তিক পর্যায়ে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় আইএমইডির উপপরিচালক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ক্রয় পরিকল্পনায় ৬৬টি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কমিয়ে প্রয়োজনে লটে বিভক্ত করে ক্রয় পরিকল্পনা করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে ওপেন টেন্ডার মেথড (ওটিএম) পদ্ধতিতে করার সুপারিশ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালকের একটি অফিস প্রয়োজন। বর্তমানে খাদ্য অধিদপ্তরের ভবনে নিজস্ব জনবল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের অস্থায়ী কার্যালয় রয়েছে। এজন্য অফিস ভবন সংস্থানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ খাতে ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।