প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন গাজীপুর বিএনপির এক নেতা। পদত্যাগী ওই নেতা হলেন জেলার নতুন কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান।
পদত্যাগ করে জেলার নতুন কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, টাকায় রাজনীতি হয় না। যোগ্যদের যথাযথ সম্মান না করায় বঞ্চিত করাই আমি পদত্যাগ করেছি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও আন্দোলনের মাঠ চাঙ্গা রাখতে মিটিং-ছিলে শামিল হতে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়েই ৫ সেপ্টেম্বর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে তৃণমূলের ত্যাগী ও অভিজ্ঞদের কমিটিতে না রাখা, অযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত এবং একই ব্যক্তিকে একাধিক পদে রাখায় চাপা ও ক্ষোভ বিরাজমান নেতাকর্মীদের মধ্যে।
গাজীপুর জেলার উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে হামলা-মামলার শিকার হয়েও দলের জন্য কাজ করছেন, তারা এ কমিটিতে নেই। তাদের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও গাজীপুর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়েদুল্লাহ, একই উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হোসেন, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের ভিপি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিন। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান আলম, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ওলামা দলের সভাপতি পীরজাদা রুহুল আমীন, সাবেক সভাপতি সিরাজ উদ্দিন কাইয়া।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ১৬ মামলার আসামি কালীগঞ্জের জামালপুর কলেজের সাবেক ভিপি, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান খান লাবলু বলেন, ব্যক্তিগত মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু কমিটিতে সবার মতামতের গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। আগামীতে দলের আন্দোলনে যার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, তৃণমূলে অনেক ত্যাগী নেতাদের যারা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নতুন কমিটিতে পথবঞ্চিত গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজ উদ্দিন কাইয়া বলেন, বর্তমান জেলা কমিটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ— ‘এক ব্যক্তির এক পদ’ মানা হয়নি। এখানে কতিপয় ব্যক্তির পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি হয়েছে। অনেক যোগ্যদের পদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা পর্যায়ে অনেক পদধারী নেতাই জেলা বিএনপিতে পথ পেয়েছেন অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে বরমী ইউনিয়নের সভাপতি আফাজ উদ্দিন প্রধান ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি রিয়াজুর হান্নান।
একই সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার বিষয়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুর হান্নান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে দুই পদে দায়িত্ব পেয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন বলেন, আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচিতে রয়েছি। কেন্দ্রীয় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাই যারা মাঠে আসতে সক্ষম তাদেরই বর্তমান কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পীরজাদা রুহুল আমীনের মতো সিনিয়র ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কমিটিতে না রাখার প্রশ্নে মিলন বলেন, দল এখন আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য তৈরি হচ্ছে। অনেক বিএনপির নেতা বয়সের ভারে নানা শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতাল কিংবা ঘরে রয়েছেন আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কমিটির বাইরে রেখেছি। অসুস্থ শরীর নিয়ে তো আর মাঠে মিটিং-মিছিলে শামিল হতে পারবেন না। তখন সিনিয়ররা পদের কারণে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন।