লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ কি বিষয়ে লিখব, চিন্তা ভাবনা করছিলাম, ঠিক করলাম কিশোর গ্যাং এদের লিডার, নিয়ে লিখবো, কেন না এদের বাবা মা কিশোর গ্যাং ছেলেদের নিয়ে বেশ গর্ব করেন, তাদের ছেলেদের রাস্তায় রান্তায়, বিভিন্ন মহলে প্রশাংসার বুলি উড়ায় যা খুবই দুঃখজনক। ইদানিং কিশোর গ্যাং দৌরাত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। এসব কিশোর গ্যাং খুন, ছিনতাই, মাদক বানিজ্য, মাদক সেবন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, পুকুর দখল, নারী কেলেঙ্করী, ইফটিজিং, প্রেমঘটিত নানা, মাছলুট, মারামারিসহ নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলার সাহস পাচ্ছে না। এরা পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বড়ভাই, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, পাতিনেতা, মাদক সম্রাটের দ্বারা। একগ্রুপ আর অন্য গ্রুপকে সাইজ করার কজেও ব্যবহার করা হচ্ছে এদেরকে। হঠাৎ টিভিতে দেখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম দিন তাই থিম পরিবর্তন করে এ সম্পের্কে আল্লাহর নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান।
বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস থেকেছেন গৃহবন্দি। সামরিক শাসনামলেও বেশ কয়েকবার কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে জন্মদিনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, চরম সংকটে দলের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা আর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দূরদর্শী ভূমিকায় করোনা সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। করোনাসহ সব দুর্যোগেও সচল রেখেছেন দেশের অগ্রযাত্রা। তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্ব দরবারেও। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও আগেই নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। বহু ঘাত-প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত জাতির মননে তিনি গেথে দিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ এক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাবার সুতীব্র আকাক্সক্ষা।
ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে এসে তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার আপামর মানুষের কল্যাণে। সমস্ত জীবন ধরে কন্টকাকীর্ণ এক দীর্ঘ পথ হেঁটে, সহস্র বাঁধা উপেক্ষা করে তিনি আজকের শেখ হাসিনা। এই পথের বাঁকে বাঁকে ছিল জীবনের ঝুঁকি। এটি এদেশের প্রতিটি মানুষই উপলদ্ধি করে। দিনে দিনে শেখ হাসিনার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য। তাঁর সুদক্ষ ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে এদেশের মানুষ একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচবার স্বপ্ন দেখে। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তথা ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এক প্রত্যয়দীপ্ত নতুন লড়াইয়ে আজ তিনি অবতীর্ণ। সেই নিরিখেই তিনি ঘোষণা করেছেন রূপকল্প ২০৪১। এই লড়াইয়ের প্রতিটি সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে। তাঁরই সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে আমরা আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি। বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। তিনি
১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে রাজনীতি তাঁর রক্তে প্রবহমান। পারিবারিক আবহের কারণেই, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলাপচারিতা ও কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করে তাঁর মধ্যে একটি রাজনীতি সচেতন মনন তৈরি হয়ে যায়। এরই প্রভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার এক দুর্নিবার তাড়না তাঁর মননে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই চেতনা ও তাড়না থেকে স্বাভাবিক কারণেই, স্কুলজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং তখন থেকেই সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ওই কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের তিনি নিবিড় ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুজিব-কন্যা হওয়ার কারণেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি তাঁকে পার করতে হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের প্রায় সকল সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই ক্ষত বাংলাদেশকে বয়ে যেতে হবে চিরকাল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকন্ডের ক্ষতি কোনদিনই পুরণ হবার নয় এবং সেই শোক আমাদেরকে বহন করে যেতে হবে আজীবন। সৌভাগ্যবশত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং বেঁচে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হারাবার দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে দীর্ঘ ছয় বছর ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে বছর ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগের সেদিনের এই সিদ্ধান্তটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের ভাগ্যলিপিকেই বদলে দিয়েছে। একটি অন্ধকার সময় পার করে বস্তুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভাবনা ও স্বপ্নের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ’৯০-এর স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে সামরিক সরকারকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার-ব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারপ্রক্রিয়া এখনও চলমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশে পাকিস্তানী ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বশূন্য অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় না পেয়ে অসহায় ও দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হয়। জাতি প্রত্যক্ষ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরকে যেন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে না হয়, বিচার কার্যক্রমও শেষ করে দেশে বিদেশে প্রশাংসাও কুড়িয়েছেন। বিদেশে বসবাসকারী বাকিতে আসামীদের দেশে এনে রায় কার্যক্রমের প্রক্রিয়াও চলছে।
২০১৪-২০১৮ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন, (এরফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় ১,৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন শুরু, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন ইত্যাদি।
চতুর্থ মেয়াদে এ পর্যন্ত অর্জিত উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন দেশের কাতারে অন্তভুক্তিকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত এবং ঢাকায় মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলা শহরের সংযোগ সড়ক চার-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে। সবগুলি বিভাগে আইসিটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর এ কারনে বারবার শেখ হাসিনাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রতিবারই তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়। ওই দিন তার গাড়িবহরে গুলি করা হলে ২৪ নেতাকর্মী শহিদ হন। একই বছরের ১৫ আগস্ট ও ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টিরকর্মীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির গ্রিন রোডের পরিবার-পরিকল্পনা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে হত্যার চেষ্টা হয়। ট্রেনে গুলিবর্ষণ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলার সময় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেন।
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে অস্ত্রধারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভার কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়, তবে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি রক্ষা পান। ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতু এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার। ঘাতক চক্র সেখানে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখেছিল। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। একই বছর ২৯ সেপ্টেম্বরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। একই বছর ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে ঘাতকের বুলেট থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পান। একই বছর ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এতে ২৪ জন নেতা কর্মী নিহত হন।
২০০৭ সালে (সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) ১৬ জুলাই অন্যায়ভাবে বিনা ওয়ারেন্টে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সাব- জেলে রেখে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রুরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সেজন্য আগাম অর্থও দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের শেষ দিকে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে কাওরান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জেএমবি। এছাড়া ২০১৮-১৯ সালে কয়েকবার তাকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলোকেও হত্যাচেষ্টা বা হত্যা ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন অনেকে। এত কিছু পর তিনি দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো প্রায়ই ভবিষ্যতে আবারও তার ওপর হামলার শঙ্কার কথা জানান। তবে তা মোকাবিলা করেই লক্ষ্য অটুট রেখে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথাও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। এবারও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন-এমন ঘটনা আগামীতেও ঘটতে পারে। দেশের মানুষকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আঘাত হয়তো আরও আসবে সামনে। কারণ যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। আর আজকেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় আবার সেই ‘জয় বাংলা’ ফিরে এসেছে। আবার জাতির পিতার নাম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবেই। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশকে আবারও সেই জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে।’
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেকগুলো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পুরষ্কার প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে এখন আমরা ঋণ দিতে শুরু করেছি। শেখ হাসিনাকে আলোকবর্তিকা ধরে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। মুক্তিযুুদ্ধের চেতনায় অপ্রতিরোধ যাত্রায় দুর্গম পথে তাকে ঘিরে এগিয়ে যেতে হবে, এটাই হোক আজকের প্রত্যাশা। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা।