ছাত্র-গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর বিএনপির ভোট নিয়ে আলোচনার দাবির মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই মতবিনিময় শুরু হবে। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। টানা পাঁচ ঘণ্টা মতবিনিময় করা হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপি ছাড়া আর কোন কোন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, এবারও তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউন‚সের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করতে পারেন বলে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আলোচনার পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। এর পর নির্বাচন সম্পন্ন করার রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিএনপি প্রতিনিধিরা মূলত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ভাবনা, নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা বলেছেন, এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এই সমর্থন থাকবে। এতে আরো জানানো হয়েছে, বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন তারা। এছাড়াও এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বর্তমান সরকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক শৃংখলা রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে এবং তারা এর সমন্বিত অংশীদার হবেন।
কয়েক দিন ধরে দলীয় কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে বিএনপি মহাসচিব। অন্যদিকে জামায়াতের নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর দলটির নেতারা যেন রাজনৈতিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। এখন তারা দল গোছানোর লক্ষ্যে নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন। এমনকি বিএনপির দাবির বিপরীত মুখে অবস্থান নেয়ার দৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গত ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের স্থায়ী কমিটি যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে। একই দিন জামায়াতসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ২৫ আগস্ট রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়।’