>>‘উটকো ঝামেলা’ প্রধান শিক্ষকের পদ
>>টানতে চান না রেজিস্টার, জবাবদিহিতার ‘ভয়’
>>চাকরির বয়স শেষদিকে, বাড়বে না বেতন-ভাতাও
>>নির্বাচনী দায়িত্ব নিয়ে ‘শঙ্কা’, গ্রেডেশন প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ
দেড় দশক পর পদোন্নতিজট খুলেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব পাচ্ছেন। গত দুই মাসে তিন জেলায় পদোন্নতি পেয়েছেন পৌনে পাঁচশো শিক্ষক। শূন্য রয়েছে আরও প্রায় ২৯ হাজারের মতো পদ। নির্বাচনের আগেই প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদগুলো পূরণ করতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু যোগ্য বহু শিক্ষক পদোন্নতি নিতে চাইছেন না। শেষ বয়সে প্রধান শিক্ষক হওয়াটা তাদের কাছে এখন ‘উটকো’ ঝামেলার। পদোন্নতিটাও ‘তেতো’। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। উপজেলা পর্যায় থেকে পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকদের তালিকাও (গ্রেডেশন) করা হয়েছে। যারা তালিকার ওপরের সারিতে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই পদোন্নতি নিতে চাইছেন না। এতে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এটা সাময়িক বিপত্তি, দ্রুত তা কেটে যাবে।
‘পদোন্নতি নিলেও তো কোনো লাভ নেই। বরং দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপবে। স্কুলে নানা আয়োজন করতে হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, সেখানে লোকজন নিয়ে যাওয়া, স্কুল সংস্কার কাজে লোক ডাকাডাকি করতে হয়। তার সঙ্গে রেজিস্টার মেন্টেইন তো আছেই। শেষ বয়সে আর প্রধান শিক্ষক হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই’
অন্যদিকে পদোন্নতি নিতে না চাওয়া শিক্ষকরা বলছেন, তাদের চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে। বয়স ও শারীরিক দিক বিবেচনায় পদোন্নতি নেওয়ার আগ্রহ নেই। কারণ প্রধান শিক্ষকের অনেক চাপ। দৈনিক ৫০-৬০টি রেজিস্টার মেইনটেইন করতে হয়। থাকে জবাবদিহি, ছোটাছুটিও করতে হয় অনেক। আবার পদোন্নতি পেলে এখন যে বেতন-ভাতা তারা পাচ্ছেন, তার চেয়ে খুব বেশি টাকা বাড়বেও না। তাই চাকরির শেষ বয়সে এসে প্রধান শিক্ষক পদটি তাদের কাছে এখন ‘উটকো’ ঝামেলার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৬২০টি। এর মধ্যে ২৯ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। ২০০৯ সালে মামলার কারণে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয়। একই বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। নিয়োগ ও পদোন্নতি পিএসসির অধীনে চলে যায়। আবারও বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ। গত ৩ আগস্ট পদোন্নতির দুয়ার খোলে।
‘দীর্ঘদিন আমরা প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নে কাজ করছি। সরকার যদি আমাদের এ দাবি মেনে নিতো, তাহলে সবাই পদোন্নতি নিতে আগ্রহী থাকতেন। এখন সহকারী অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাদের বেতন-ভাতা আগে থেকেই প্রধান শিক্ষক হয়ে যা পাবেন তারচেয়ে বেশি। ফলে অনেকে পদোন্নতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না’
পিএসসি চূড়ান্ত তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠালে অফিস আদেশ জারি করা হয়। এমন সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া শেষের পর এখন পদোন্নতি নিতে চাইছেন না অনেক শিক্ষক। বাধ্য হয়ে তাদের আবেদন করতে নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। নির্দেশনার পর প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক পদোন্নতি নিতে চান না জানিয়ে আবেদন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মনীষ চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কেউ কেউ নিতে চাইছেন না। চাকরির বয়স শেষসহ নানা কারণের কথা জানাচ্ছেন। ব্যক্তিগত নানান কারণও উল্লেখ করছেন। কেউ অনাগ্রহী হলে তাকে তো জোর করে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। আমরা সেটা নিয়েও কাজ করছি।
চাঁদপুরের হাইমচরের উত্তর চরভৈরবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন মিনতি রানী দাস। তার স্বামীও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সম্প্রতি অবসরে গেছেন। মিনতি রানীর চাকরির বয়স আছে মাত্র তিন বছর। এখন তিনি আর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে চান না। কিন্তু পদোন্নতি গ্রেডেশন তালিকায় উপজেলায় প্রথমদিকে তার নাম। বাধ্য হয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পদোন্নতি না নিতে আবেদন করেছেন।
মিনতি রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা সময় পদোন্নতি পাওয়ার আশা করতাম। এখন আর ওগুলোতে টানে না, বরং তেতো লাগে। খোঁজ নিয়ে দেখেন প্রধান শিক্ষকের কত কাজ! আমার স্কুলে ৬২টা খাতা (রেজিস্টার)। সব খাতার আলাদা আলাদা কাজ। এত কাজ করা আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়। বয়স হয়েছে, মাত্র তিন বছর আর চাকরি আছে। ভালোভাবে শেষ করতে চাই। এত দায়িত্ব, ঝামেলা কাঁধে নেওয়া সম্ভব নয়।’
‘জ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষক, যিনি ৩০ বছর চাকরি করছেন, এখন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবেন না, সেটা তো তার অক্ষমতা ও অদক্ষতা। হ্যাঁ, এখন যদি কারও ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব নিতে না চাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য এবং দুঃখজনক’
প্রধান শিক্ষকের পদটা উটকো ঝামেলাপূর্ণ বলে মনে করেন একই উপজেলার আরেক শিক্ষিকা উজ্জলা রানী। তিনি হাইমচরের খুদিয়া বাজাপ্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। উজ্জলা রানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়িতে আমি একা থাকি। এক ছেলে ও মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আরেক ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। এ বয়সে ঘর সামলে আবার স্কুল সামলানো আমার জন্য কঠিন। এজন্য পদোন্নতি না নিতে আবেদন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদোন্নতি নিলেও তো কোনো লাভ নেই। বরং দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপবে। স্কুলে নানা আয়োজন করতে হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, সেখানে লোকজন নিয়ে যাওয়া, স্কুল সংস্কার কাজে লোক ডাকাডাকি করতে হয়। তার সঙ্গে রেজিস্টার মেন্টেইন তো আছেই। আমার শেষ বয়সে আর প্রধান শিক্ষক হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।’
হাইমচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রেডেশন তালিকায় সামনের দিকে যাদের নাম আছে, তাদের মধ্যে শুধু হাইমচর উপজেলায়ই ১২-১৪ জন পদোন্নতি নিতে চান না। তারা এখন আবেদন করার জন্য ছোটাছুটি করছেন। ঝামেলা এড়াতে কেউ পদোন্নতিতে আগ্রহী নন।’
বর্তমান বেতন স্কেল অনুযায়ী—প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড পাচ্ছেন। যারা দীর্ঘদিন চাকরি করছেন, তারা ইনক্রিমেন্ট এবং অন্য সুবিধাসহ যে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, প্রধান শিক্ষক হলে তার চেয়ে খুব বেশি বাড়বে না। কারও হয়তো ৪০০ টাকা, কারও ৬০০ টাকা বাড়তে পারে। বেতন-ভাতা না বাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদকে উটকো ঝামেলা মনে করে কাঁধে নিতে চান না জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকরা।
নাজিবুর রহমান নামে কুষ্টিয়ার একজন শিক্ষক বলেন, ‘চাকরির যে বয়স, ইনক্রিমেন্টসহ আমি এখন যে বেতন পাচ্ছি, প্রধান শিক্ষক হলে আমার আর ৪০০ টাকার মতো বাড়বে। অবসরের পরও বিশেষ বাড়তি কোনো সুবিধা যুক্ত হবে না। এজন্য পদোন্নতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক হতে চাইনি।’
তিনি বলেন, ‘সৎভাবে থাকলে এ দায়িত্ব নেওয়ায় আরও ক্ষতি। অল্প কিছু টাকা বেতন-ভাতা বাড়বে, এজন্য হাজারও কাজ। অধিকাংশ স্কুলে পিয়ন নেই, আয়া নেই, ঝাড়ুদার নেই, অনেক পদ শূন্য। বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষককে অনেক সময় বাথরুমও পরিষ্কার করতে হয়। নিজ চোখে আমি এটা দেখেছি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নাজিবুর রহমানের কথার সঙ্গে একমত বলে জানান। রাজিয়া আক্তার নামে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলে মা সমাবেশ ডাকো, ডাকলাম। সব আয়োজন করলাম। সকালে মা সমাবেশ শেষ করেছি, বিকেলে এটা কতটুকু সফল হলো তা শিক্ষা অফিসে জানাতে হবে। স্কুলের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সংস্কার করা দরকার। লোক ডাকলাম, কিন্তু টাকা? টাকাটাও আমার নিজের দিতে হবে। বিল-ভাউচার করে জমা দিলে অনেকদিন পর টাকা তোলা যাবে। কখনো ছয় মাস পর্যন্ত লেগে যায়। এমন হাজারও কাজ ও দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের।’
প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নে কাজ করছি। সরকার যদি আমাদের এ দাবি মেনে নিতো, তাহলে সবাই পদোন্নতি নিতে আগ্রহী থাকতেন। এখন সহকারী অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাদের বেতন-ভাতা আগে থেকেই প্রধান শিক্ষক হয়ে যা পাবেন তারচেয়ে বেশি। ফলে অনেকে পদোন্নতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এটাকে বড় চাপ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা। নির্বাচনে অনিয়ম হলে সেটার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নিয়মও রয়েছে। এজন্য চাকরি জীবনের শেষ সময়ে ‘নিরীহ’ প্রকৃতির শিক্ষকদের অনেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি নিতে চাইছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজবাড়ী সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পরিবারের অনেক সদস্য রাজনীতি করেন। ভাই, চাচারা কেউ আওয়ামী লীগ করেন, আবার কেউ বিএনপিও করেন। নির্বাচনী দায়িত্ব কাঁধে পড়লে আমার জন্য খুবই ঝামেলার এবং ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সেজন্য গ্রেডেশনে একেবারে প্রথম দিকে নাম থাকলেও আমি পদোন্নতি নেবো না বলে আবেদন করেছি।’
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার এক শিক্ষিকাও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ধার্মিক মানুষ। একটা ইসলামি দলের সঙ্গে মেশেন। মাঝে মধ্যে এদিক-সেদিকে মিছিলেও যান। এটা নিয়ে স্কুলে অনেক কথা শুনতে হয়। প্রধান শিক্ষক হলে নির্বাচনে দায়িত্ব দিলে আমি হেনন্তার শিকারও হতে পারি। এজন্য পদোন্নতি নেবো না।’
রাজবাড়ী ও রাজশাহীর দুই শিক্ষকের মতো ঢাকার কয়েকজন শিক্ষকও নির্বাচনকেন্দ্রিক সমস্যার কথা জানান। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করা হলে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে তো কোনো ঝামেলার সুযোগ নেই। কোনো ভোটকেন্দ্রে যদি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে, সেটাতে তার (শিক্ষক) সংশ্লিষ্টতা না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
২০১১ সালের নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক যেদিনই যোগদান করুক, জন্মতারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয়। ফলে চাকরিতে আগে যোগদান করলেও অনেকে জন্মতারিখে এক-দুই মাস এগিয়ে থাকায় তালিকায় তাদের এগিয়ে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেকে পদোন্নতি নিতে আগ্রহী নন।
চাঁদপুরের গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাকরিতে আগে যোগদান করেছি। আমার পরে চাকরি পেয়ে যারা যোগ দিয়েছেন, তারা আমার চেয়ে এখন বেশি বেতন পাচ্ছেন। এখন আবার দেখছি গ্রেডেশনের তালিকায়ও তারা ওপরে। পদোন্নতিও তারাই পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘চাকরিতে যোগদানের তারিখ না ধরে জন্মতারিখ ধরে গ্রেডেশন তালিকা করা হয়েছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। বয়সে ছোট কিন্তু আগে চাকরি কেউ মেধার জোরে পেতেই পারেন। আবার অনেকে বয়স বেশি কিংবা সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকেও যোগ দেন। যিনি আগে যোগদান করবেন, তিনিই জ্যেষ্ঠ বিবেচিত হওয়া উচিত। তাহলে পদোন্নতি নিয়ে যে ঝামেলা, সেটাও কমতো। বয়স্করা দায়-দায়িত্ব নিতে চান না।’
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘নীতিমালা মেনেই আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রেডেশন করেছি। নীতিমালার বাইরে যাওয়ার তো সুযোগ নেই। একটু ঝামেলা তো আছেই। সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি দ্রুত প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব পেশায়ই দায়িত্ব থাকে। একজন শিক্ষক চাকরিজীবন শুরু করবেন, ধীরে ধীরে ওপরে উঠবেন। জ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষক, যিনি ৩০ বছর চাকরি করছেন, এখন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবেন না, সেটা তো তার অক্ষমতা ও অদক্ষতা। হ্যাঁ, এখন যদি কারও ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব নিতে না চাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য এবং দুঃখজনক।’