বরিশাল,১৬ এপ্রিল শনিবার:

পানি সম্পদ  প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ না করলে আজ আমরা বাঙ্গালি জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়াতে পারতাম না এবং বাংলাদেশী হিসেবে স্মীকৃতি লাভ করতে পারতাম না। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ হলেও আমরা কৃষি নির্ভরশীল দেশ। এ দেশ নির্ভর করে কৃষি উৎপাদনের ওপরে। বাংলাদেশের উন্নয়ন নির্ভর করে আপনারা যারা কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। আপনাদের হাত শক্ত হলে দেশও শক্ত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে করতেন কৃষকের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমেই বাংলাদেশর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। এছাড়া তার নির্দেশনা ছিলো-কৃষক ভাইদের প্রতি খেয়াল রাখার। আর এ লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন।

আজ খরিপ-১/২০২২-২৩ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাধীনতার পরবর্তী জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে জমি কমেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন; আমাদের  জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু জমি বৃদ্ধি পায়নি। তারপরও কৃষক ভাইদের আন্তরিকতা, নিরলস কষ্ট ও সরকারের সহযোগীতা পেয়ে আজ বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি, এটা বিশ্বের আশ্চর্য একটা জিনিস। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষনা করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করায়। আগে যেখানে আমরা একটা ফসল উৎপাদন করতাম, এখন সেখানে দুটা-তিনটা ফসল উৎপাদন করি। যারমধ্য দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে কৃষি জমির পরিমান কমে গেলেও খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি পরেনি।

জাহিদ ফারুক বলেন, আপনারা যারা কৃষক ভাইয়েরা রয়েছেন, আপনাদের পরিবারের যে সন্তানরা রয়েছেন তারা একত্রিত থাকুন। যখন আপনার ৫ সন্তানকে জমির ভাগ ৫টি করে দেন তখন কেউ না কেউ জমির মাঝখানে ঘর তোলেন। এরকরম করে হিসেব করুন প্রতিনিয়ত কত শতাংশ ফসলি জমি হারাচ্ছে। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, চিন্তা ভাবনা করুন- এক জায়গাতে থেকে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে ভালোও থাকবেন এবং ভালো ও সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন। যখনই ফসলের জমির পরিমান কমে যাবে, উৎপাদনের পরিমানটাও কমে যাবে।কারণ বৈজ্ঞানিকরা যতোই গবেষনা করুক না কেন, এরও একটা সীমা রয়েছে। যেখানে আমরা একটি ফসল উৎপাদন করতাম সেখানে তিনটি ফসল উৎপাদন করছি। এভাবে করতে করতে এসময় ফসল উৎপাদন স্থিতিশীল থাকবে এবং লোকসংখ্যা বাড়তে থাকবে। আমার অনুরোধ, আপনার সন্তানদের জমি ভাগ করে দিন কিন্তু বসবাস একসাথে থাকুক। ফসলি জমিটা আপনারা মেহেরবানি করে নষ্ট করবেন না।

প্রতিমন্ত্রী  জাহিদ বলেন, আপনারাই বলেছেন বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তখন সারের দাবিতে ২০ জন কৃষক ভাই আত্মহুতি দিয়েছে, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখন বিনা পয়সায় বিজ ও সার দিতে চাইলেও লোক নাকি আসে না। এখন ইউরিয়া এক কেজির দাম ধরা হয় ১৬ টাকা, সেটার বাজারে দাম ৯৮ টাকা। সেখানে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৮২ টাকা। আবার টিএসপি সার যেটা সরকার বিক্রি করছে ২২ টাকায়, সেটার বাজারে দাম ৮৭ টাকা আর সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৬৫ টাকা। ডিএপি সার সরকারের পক্ষ থেকে বিক্রি করা হয় ১৬ টাকা করে, যেটার বাজারে দাম ৯৬ টাকা এবং ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। এমওপির দাম ১৫ টাকা, বাজারের দাম ৬৩ টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৪৮ টাকা। তাহলে চিন্তা করেন সরকার আপনাদের ফসল উৎপাদনের জন্য কত সহায়তা করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন; ভর্তুকি দিয়ে প্রতিবছর একটা করে পদ্মাসেতু নির্মা করা যেতো বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এই ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে শুধু কৃষক ভাইদের জন্য, আমাদের দেশের মানুষ যাতে অভূক্ত না থাকেন, খেয়ে পরে বেঁচে থাকেন, আমাদের দেশের মানুষ যাতে সাবলম্বী হতে পারে সেজন্য। পেটে ভাত থাকলে কাজ করতে কষ্ট হবে না আর না থাকলে পারবেন না। কৃষি থেকে আজকে আমরা আভ্যন্তরীন চাহিদা মেটাচ্ছি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখান থেকে কিছু উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আম, পেয়ারা, সবজি রপ্তানি করছি। এগুলো হলে কৃষিখাতেও বিদেশী মুদ্রা আয় করতে পারবো। এতে করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সপ্ন বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পৌছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী দেশে পৌছানোর লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হবো। এজন্য কৃষক ভাইদের ভূমিকা সবথেকে বেশি।

তিনি আরো বলেন, গ্রামে-গঞ্জে খালি জমি পরে থাকে, কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ সেসব জায়গাতে ফসল উৎপাদন করুন। জমির মালিক চাষ না করলে বর্গা দিন। এক কড়া জমিও খালি রাখতে দিবনা, অনাবাদি রাখবো না, এটাই সবার প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানে  স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরিশাল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ ফাহিমা হক।

বরিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ হারুন অর রশিদ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুবুর রহমান মধু।